প্রাণকে বিচলিত করে, বিদ্রোহী করিয়া তোলে, তাহাই তোমার বিধর্ম্ম। কল্পনা-বিলাস বা তত্ত্ব হিসাবে যাহা তোমার শ্রেয়ঃ, তাহাই সত্য নয়; কারণ, তোমার নিজ চেতনার বাহিরে, কেবলমাত্র চিন্তাহিসাবে, কোনও সত্য নাই; আবার, যাহা তোমার জীবচেষ্টাকে অলস করিয়া দদ্রুকণ্ডূয়নের মত সুখসাধন করে, তাহাও সত্য নয়; কারণ, তাহা স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর। যাহা তুমি বিশ্বাস কর, তাহাই সত্য। সূক্ষ্ম তত্ত্ব, উৎকৃষ্ট যুক্তি বা উদার ভাব—সূক্ষ্ম, উৎকৃষ্ট বা উদার বলিয়াই সত্য নয়; যদি প্রাণে সাড়া না পায়, যদি বিশ্বাস উৎপাদন না করে, তবে তাহাও তোমার পক্ষে মিথ্যা। এই বিশ্বাস অর্থে মনের সম্মতি নয়, ভাববিভোরতাও নয়—প্রাণের মধ্যে শক্তিসঞ্চার। এই বিশ্বাসের প্রমাণ— নিষ্ঠা, অভয় ও একাগ্রতা; নিদ্রালস সুখস্বপ্ন নয়, প্রলাপোক্তি নয়, শক্তিক্ষয়ের সুখলাম্পট্যও নয়। তুমি যাহা বিশ্বাস কর তাহাই সত্য, কারণ, তাহাই তোমার স্বধর্ম্ম। জীবনের স্বাস্থ্যই সত্যের একমাত্র প্রমাণ, সত্যের সত্যহিসাবে আর কোনও মূল্য বা অর্থ নাই।
তাই মানুষ যখন আপনার সেই প্রাণকে আবৃত করিয়া পরের অনুকরণে আপনাকে সজ্জিত করে, সত্যকে একটা বহির্গত আদর্শ মনে করিয়া এবং আপনা হইতে তাহাকে অতিশয় উচ্চ দেখিয়াই, তাহার রঙে নিজেকে রঙিন করিয়া রাখিতে চেষ্টা করে—বিদ্রোহী বীর বলিয়া পরিচিত হইবার আকাঙ্ক্ষায়, অথবা বহুজন-পূজিত কোনও ব্যক্তির সাদৃশ্যলাভের আশায়, স্বধর্ম্ম ত্যাগ করিয়া পরধর্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করে, তখন সেই মিথ্যার পীড়নে তাহার আত্মা কলুষিত হইয়া উঠে। সারা জীবন একটা অভিনয়ের ভূমিকা রক্ষা করিতে গিয়া সে একটা প্রাণহীন যন্ত্র হইয়া উঠে; বাহিরের প্রতিষ্ঠাই তাহার একমাত্র সম্বল বলিয়া, সে অন্তরে শক্তিহীন