হইয়া পড়ে। স্বধর্ম্মের মূল—আত্মস্ফূর্ত্তি, তাহার ফল—বিশ্বাস, ও লক্ষণ— নির্ভীকতা; পরধর্ম্মের মূল—আত্মসঙ্কোচ বা কুণ্ঠা; তাহার ফল আত্মপ্রবঞ্চনা, ও লক্ষণ ভয়। সত্যকে যাহারা তত্ত্ব, শাস্ত্রবিধি বা স্বনুষ্ঠিত পরধর্ম্মের মধ্যে উপলব্ধি করিতে চায়, নিজের প্রাণকে প্রামাণ্য না করিয়া কেবল মনেরই মনরক্ষা করে, জগতে তাহার মত ভাগ্যহত আর কে আছে?
জগৎ ও জীবনকে মানুষ আপনার প্রাণের মধ্যে আপনার মত করিয়া গ্রহণ করে, তাই জগৎ সম্বন্ধে সকলের মনে একটা সাধারণ ধারণা থাকিলেও, প্রত্যেকের জগৎ স্বতন্ত্র। মন এই প্রাণের সম্বন্ধ স্বীকার না করিয়া জগৎকে ব্যক্তি-নিরপেক্ষ একটা সত্ত্বারূপে ভাবনা করে, তাই দর্শনের সত্য অদর্শন হইয়া উঠে। বিজ্ঞান জড়ের রহস্য ভেদ করিতে চায়, সেও মনের ক্ষুধা, প্রাণের নয়। দুঃশাসন মন প্রকৃতি-দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করিতে চায়,—সে বসন যতই পর্দ্দায় পর্দ্দায় বিচিত্র ও রাশীকৃত হইয়া উঠে, ততই তাহার লালসা বাড়ে; শেষে সে আপনাকে ভুলিয়া যায়, যাদুকরীর যাদুমন্ত্রে আচ্ছন্ন হইয়া ভূতগ্রস্তের মত বিচরণ করে। সত্যকে সেও পায় না, হয়তো শেষে আর চায়ও না—অসংলগ্ন ও অসম্পূর্ণ কতকগুলি তত্ত্ব, জড়শক্তির কতকগুলি ব্যবহারিক নিয়ম আবিষ্কার করিয়া, তাহা হইতেই এমন একটা সিদ্ধান্ত করে, যাহাতে সংশয়ই সত্য হইয়া উঠে; মন প্রথম হইতে যে সত্যের সন্ধান করিয়াছিল, সে সত্যের আশা একেবারেই ছাড়িয়া দিতে হয়। প্রকৃতির অবগুণ্ঠন খুলিতে গিয়া সে এমন একটা যন্ত্রের আভাস পায় যে, গণিতশাস্ত্রই তাহার বেদ হইয়া উঠে। বিজ্ঞান যে-রহস্যের সমাধান করিতে পারে নাই, তাহার রসটুকু বাহির করিয়া দিয়াছে; যন্ত্রের জড়ধর্ম্মই মানুষের জীবন-ধর্ম্মের আদর্শ হইয়া উঠিয়াছে।