অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
বঙ্কিম-জীবনী বা বঙ্কিম-সাহিত্য—কোনটারই সম্যক আলোচনা এ যাবৎ বাংলাসাহিত্যে হয় নাই। না হওয়ার কারণ অনেক। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম ও বিবেকানন্দ, সে যুগের এই তিন মহত্তর বাঙালী পুরুষ মনঃপ্রাণের যে শক্তি ও যে প্রতিভার পরিচয় দিয়াছিলেন, তাহা এই অলস, ভাবাতিরেক-দুর্ব্বল চরিত্রহীন জাতিকে ক্ষণেকের জন্য বিস্ময়-বিমূঢ় করিয়াছিল মাত্র—সে জীবন, সে চরিত্রকে বুঝিবার শক্তিও ছিল না, আকাঙ্ক্ষাও ছিল না। চিন্তার ক্ষেত্রে বাঙালী মৌলিকতাকে ভয় করে—তৎপরিবর্ত্তে বিদেশী বিদ্যার ধার-করা বড়-বড় বুলি সংক্ষেপে ও সহজে মুখস্থ করিয়া তাহারই আবৃত্তি দ্বারা স্বদেশী সমাজে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়া থাকে। গত এক শত বৎসরের অধিক কাল যে শিক্ষা জাতীয় শিক্ষারূপে পরিণত হইয়াছে—সে শিক্ষা এই প্রবৃত্তির পুষ্টি সাধনপক্ষে বড়ই উপযোগী হইয়াছে। এক ধরনের মেধা—যাহাকে পরবিদ্যা মগজস্থ করিবার শক্তি বলা যাইতে পারে—স্বকীয় চিন্তার বিঘ্নমাত্র ব্যতিরেকে পরকীয় চিন্তার অনুসরণ, ও তদ্দ্বারা মস্তিষ্ক-ভরণ করিবার সেই যে শক্তি—তাহাই সাধারণ বাঙালী-জিনিয়াস। ইহাতে, যে সকল বিষয় বিদেশের পণ্ডিতেরা সমাধান করিয়া দিয়াছেন, সেই বিষয়ে পঞ্চমুখ হওয়া তাহার পক্ষে সুখসাধ্য, এবং তাহাই পাণ্ডিত্য প্রমাণ করিবার সহজ পন্থা। কিন্তু নিজের সমাজে, সাহিত্যে ও জীবনে, যদি ভাবিবার মত কিছু থাকে—কোনও নূতন আবির্ভাব, মৌলিক প্রতিভা বা অভিনব প্রকাশ ঘটে, তবে তাহার বড়ই মুশকিল হয়। যদি সে সম্বন্ধে কোনও