দ্বিতীয়ত, বঙ্কিমচন্দ্রের প্রসঙ্গে শুধুই পাণ্ডিত্য ও রসবোধ নয়—সাত্ত্বিকী শ্রদ্ধার প্রয়োজনও আছে। সস্তা পাণ্ডিত্যের ও যা-খুশি বলিবার সৎসাহস যাহাদের আত্মপ্রসাদের কারণ, নিজেরা মনে ও প্রাণে অতিশয় ক্ষুদ্র বলিয়া মহত্ত্বের প্রতি যাহাদের সহজাত আক্রোশ—বড়র প্রতি দাঁত খিঁচাইয়া নিজেদের ইতরতা প্রকাশ করিয়া দিতে যাহাদের কিছু মাত্র বাধে না—তাহাদের সমাজে বঙ্কিম-প্রসঙ্গ উত্থাপন করিতেই অতিশয় সঙ্কোচ বোধ হয়। উত্থাপন করিয়া কোনও লাভ নাই। সমুদ্র দেখিয়াও যাহারা তাহাকে একটা খুব বড় পুকুর বলিয়া ধারণা করে, গৌরীশৃঙ্গ দেখিয়া একটা অত্যন্ত বিসদৃশ বিপর্য্যয় এবং দুরারোহ পাথুরে-কাণ্ড বলিয়া যাহারা নাসিকা কুঞ্চিত করে—তাহাদের সঙ্গে পারিয়া উঠিবে কে? কিন্তু উঁচু ঢিবি ও তালপুকুরের কথা সকলেই বোঝে। এ আসরে বঙ্কিমের পরিচয় করিতে পাওয়া বাতুলতা নয় কি?
তথাপি কথাটা তুলিয়াছি। সত্যকার রসিকের সংখ্যা কোনও কালে কোনও সমাজে অধিক নয়। একালে আরও কম। কারণ এ যুগের আবহাওয়াই রসিকতাবিরোধী। যেটুকু রসিকতা আমাদের এই সমাজে ছিল বা এখনও আছে, তাহাও এই যুগ-বিরুদ্ধতার ফলে যেন সঙ্কুচিত হইয়াছে—মুখ ফুটিতে পায় না। এককালে অল্পই বহুকে শাসন করিয়াছে—যখন বিদ্যার কৌলিন্য ছিল, তখন তাহার কাছে মূর্খতা আত্মসম্বরণ করিত। এখন দুই টাকায় যেমন বড়মানুষী করা যায়, তেমনই দুই পাতা বর্ণজ্ঞান লইয়া রসনার আস্ফালনে বাধা নাই! এ অবস্থা বিশেষ করিয়া দাস-জাতির পক্ষে অবশ্যম্ভাবী; কারণ, আত্ম-মর্য্যাদাবোধ যাহার নাই, তাহার মহৎকে অপমান করিতে বাধে না। এ সমাজে ইহারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, অথবা ইহাদের লইয়াই সমাজ। এখানে বিদ্যা,