ভদ্রতা বা রসিকতা যদি কোথায়ও থাকে, তবে তাহা নির্ব্বাসন-দুঃখ ভোগ করিতেছে। বোল না ফুটিতেই যাহারা বাপান্ত করে, তাহাদের সম্মুখে কথা কহিবে কে? তাই সাহিত্য-রসিকও নীরব। রসিকের পক্ষ সমর্থন করিবার প্রয়োজন নাই জানি, আমিও পক্ষ সমর্থন করিতে বসি নাই—কারণ, রসবোধ বাদ-প্রতিবাদের বস্তু নয়, বেরসিকের বিরুদ্ধে রসিকের একমাত্র উপায় স্থান-ত্যাগ। কিন্তু বঙ্কিম-সম্বন্ধে কোনও রূপ আলোচনা প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে—সে আলোচনা এ যুগের রসিকসমাজে নূতন করিয়া আরম্ভ করা প্রয়োজন মনে করিয়াছি। তাই মূর্খ ও বেরসিকের আক্রমণকে উপলক্ষ্যমাত্র করিয়া আমি রসিকজনের সঙ্গেই কিঞ্চিৎ আলাপ করিব।
বঙ্কিমচন্দ্র যে বাংলা সাহিত্যের কে, তাহা যাহাদিগকে তর্ক করিয়া বুঝাইতে হয়, তাহাদের জন্য এ প্রসঙ্গের অবতারণা করি নাই। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক হইতে এক দল সাহিত্যিক (অধিকাংশই রবীন্দ্রশিষ্য!) রব তুলিয়াছিলেন, বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের যত বড় লেখকই হউন, তিনি যে উপন্যাসগুলি লিখিয়াছিলেন, তাহা উৎকৃষ্ট আর্টের দিক দিয়া ব্যর্থ হইয়াছে। এ ধুয়া আরও উচ্চে উঠিল—আধুনিকতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বঙ্কিম-বিরোধী মনোভাবে। তাহারও পরে, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলির সম্বন্ধে মাঝে মাঝে যে সকল বাক্য উচ্চারণ করিয়াছেন, তাহার দৃষ্টান্তে, শৌখিন সাহিত্যিক-মজলিসে যে উঁচুদরের সাহিত্য-সমালোচনা হইয়া থাকে, এবং যাহা মৌলিক সমালোচনা-প্রবন্ধ-রূপে— বাংলা মাসিকে অর্থাৎ, হীনযান ও মহাযান উভয় সম্প্রদায়ের সাহিত্য-রসিক পাঠকগণের দরবারে প্রকাশিত হইয়া থাকে, তাহাতে বঙ্কিমচন্দ্রকে অপদস্থ না