পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৩৫

করিলে আধুনিক হওয়া যায় না। শরৎচন্দ্রের মনোভাব অতিশয় সহজবোধ্য, রবীন্দ্রনাথের ততটা নয়। শরৎচন্দ্র যে বিষয়ে যাহা বলেন, তাহা সমালোচনা নয়—সমালোচনা বলিয়া মনে করিলে তাঁহার প্রতিভার বৈশিষ্ট্য অস্বীকার করা হয়। কারণ, কোনরূপ সবল মনোবৃত্তি বা বিচারশক্তি যদি তাঁহার সৃজনী শক্তির সহিত যুক্ত থাকিত, তবে তিনি যাহা লিখিয়াছেন, তাহা তেমনটি হইত না—শরৎচন্দ্র এত ‘পপুলার’ হইতেন না। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রতি তাঁহার আক্রোশ যদি না থাকিত, তবে বিস্মিত হইবার কারণ ঘটিত। বঙ্কিম-প্রতিভা ও শরৎ-প্রতিভা—পুরুষ ও নারী-চরিত্রের মত বিপরীত; অতএব ভাবের ক্ষেত্রে, বঙ্কিম-সাহিত্যের প্রতি শরৎ-চিত্তের একটা আদিম বিতৃষ্ণা বা natural antipathy থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বিমুখতা, বিশেষত এই শেষ বয়সে, একটু বিচিত্র বটে। কারণ, রবীন্দ্রনাথের কবি-ধর্ম্ম অতিশয় স্ব-তন্ত্র হইলেও, তাঁহার প্রতিভা খুবই আত্মসচেতন; এবং সেই জন্য অন্ধ আত্ম-সংস্কারকে—অতিশয় অবোধ instinct-কেই অবলম্বন করিয়া তিনি, বঙ্কিমচন্দ্র অথবা অন্য কোনও ভিন্ন-ধর্ম্মা শক্তিমান সাহিত্যিকের কবিকীর্ত্তির মূল্য নিরুপণ করিবেন—তাঁহার সাহিত্য-সমালোচনার যে ভঙ্গির পরিচয় আমরা বহু পূর্ব্বে পাইয়াছিলাম, তাহাতে তাহা বিশ্বাস করা কঠিন। একমাত্র কারণ এই হইতে পারে যে, কবি-ব্যক্তিত্বের বহুত্বই তাঁহার যেমন কাম্য, তেমনই সমালোচনা বা যুক্তি-চিন্তার ক্ষেত্রেও তিনি বহু-বচনের পক্ষপাতী। তা ছাড়া, সকল কালের সমবয়সী হওয়ার বা সর্ব্বদা ‘আপ-টু-ডেট’ থাকিবার যে সাধনা, তাহাতে তিনি অতিমাত্রায় বিশ্বাসী; তিনি বৃদ্ধ হইবেন না—এবং স্থাবরতাই স্থবিরতার লক্ষণ—সেজন্য