স্থাবরতাকে বর্জ্জন করিতে হইবে, এমন একটা সঙ্কল্প তাঁহার ইদানীন্তন সাহিত্যিক প্রয়াসগুলির মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কালধর্ম্মে বঙ্কিমচন্দ্র যখন বাতিল হইতে বসিয়াছেন, তখন অতিশয় সজাগ থাকিয়া সেই কালের অনুবর্ত্তন করিতে না পারিলে তিনিও বাতিল হইয়া যাইবেন—এ ভয় তাঁহার প্রবল; তাহার প্রমাণ অতি-আধুনিকদিগের সঙ্গে বারবার রফা করিবার চেষ্টায় নিত্যই পাওয়া যাইতেছে।
বঙ্কিমের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ—তাঁহার কল্পনার ‘অ্যারিস্টোক্রেসি’; তিনি নিম্নশ্রেণীর মানুষকে লইয়া উপন্যাস রচনা করেন নাই, অর্থাৎ রামা-শ্যামা বা রামী-বামী তাঁহার সহানুভূতি লাভ করে নাই—তিনি জীবনের বাস্তবতাকে স্বীকার করেন নাই। আর এক গুরুতর অভিযোগ এই যে, তিনি ধর্ম্ম ও নীতিকে তাঁহার রচিত চরিত্র ও ঘটনাসৃষ্টিতে এতই প্রাধান্য দিয়াছেন যে, তাহাতে রসিকের রসবোধকে পীড়িত, অপমানিত করা হইয়াছে। এত বড় জবরদস্ত নীতি-শিক্ষক ও গোঁড়া বর্ণাভিমানী ব্রাহ্মণ যে, সে কবি হয় কেমন করিয়া? তাঁহার উপন্যাসগুলির প্লট এক-একটা ছেলে-ভুলানো ফাঁকি—তাঁহার চরিত্রগুলা এমন ভাবে চলে যে, তাহাতে সাইকলজির সত্য নাই, জীবনের স্ফূর্ত্তি তাহাতে নাই। এই সকল উক্তির সপক্ষে যে যুক্তি দেওয়া হয়, তাহা আর কিছুই নয়—তাহাও এই উক্তিরই পুনরাবৃত্তি; অর্থাৎ, যেহেতু তাহাতে নীতি ও ধর্ম্মের প্ররোচনা আছে এবং যেহেতু তাহার মধ্যে বাস্তবানুকৃতি নাই, অতএব সেগুলা আর্ট-সম্মত রসরচনা নহে।
এই সকল কথার অন্তরালে যে মনোবৃত্তি বা সাহিত্য-জ্ঞান আছে, আমাদের দেশে অতিশয় শিক্ষিতম্মন্য ব্যক্তিও তাহার উপরে উঠিতে