পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৩৭

পারেন না। রসবোধ বা উচ্চাঙ্গের সাহিত্য-জ্ঞান সকলের কাছে আশা করাই অসঙ্গত; কিন্তু প্রাকৃত রুচি ও অশিক্ষিত মনোবৃত্তি যদি শিক্ষিত সমাজেও প্রশ্রয় পায়, তবে সর্ব্ববিধ সাহিত্যিক আলোচনাই নিষ্ফল। আধুনিকত্বের ধ্বজাধারী নব্য রসিকসম্প্রদায় যে রুচি ও রসবোধকে সদম্ভে প্রচার করিতেছেন, তাহার বিরুদ্ধে কিছু বলিয়া লাভ নাই; কারণ যাহা নিতাম্ভই সাময়িক, এবং সেই হেতু বহুব্যাপ্ত, তাহাকে লইয়া বিচার চলে না। কিন্তু আধুনিককে ছাড়িয়া, প্রাচীনতর ও সুপ্রতিষ্ঠিত যে সাহিত্যকীর্ত্তি, কালের নিকষে যাহার মূল্য একরূপ নির্দ্ধারিত হইয়া গিয়াছে; তিন চার পুরুষ ধরিয়া যাহার রস-সংবেদনা বহু-রসিক-চিত্তে গভীরভাবে সাড়া জাগাইয়াছে—আধুনিক বাংলা সাহিত্যের আদি ও শ্রেষ্ঠ প্রতিভারূপে যাহার আসন আজিও সকল সাহিত্যরসিক ও সাহিত্যজ্ঞানী বাঙালীর হৃদয়ে অটল হইয়া আছে, তাঁহার সৃষ্ট সাহিত্যসম্বন্ধে, এ কালের বড় হইতে ছোট সকলের মুখে এই যে সকল কথা নির্ব্বিবাদে প্রচারিত হইতেছে, ইহার কারণ অনেক হইতে পারে; কিন্তু যে একটা কারণ সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে, তাহাতে শিক্ষিত বাঙালীর সম্বন্ধে লজ্জিত হইতে হয়। ব্যক্তিগত রুচি বা রসবোধ লইয়া বিবাদ করা চলে না—বঙ্কিমচন্দ্রের কাব্যে যে রস আছে, তাহা আধুনিক মনোধর্ম্ম বা জৈব-প্রবৃত্তির অনুকূল না হইতে পারে—যেখানে ধর্ম্মগত বিরোধ আছে, সেখানে রসবিচার অবান্তর। কিন্তু এইরূপ মনোধর্ম্ম ও ব্যক্তিগত সংস্কার, বা বিশেষ প্রবৃত্তির বশবর্ত্তী হইয়া যাহারা সাহিত্যের সার্ব্বভৌমিক আদর্শকে অস্বীকার করে, এবং সাহিত্যসমালোচনা বা রসবিচারের মূল নীতি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ হইয়াও যুক্তি-তর্কের আস্ফালন করে, তাহারাই যদি বাঙালী শিক্ষিত-সমাজের