পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৪৩

আর এক-জাতীয় বলিয়া আর একটা নাম—ওইরূপ ‘ক্লাসিফিকেশন’ করিয়া থাক। শুধু তুমি কেন, কবিগণেরও ঐরূপ একটা সংস্কার তাঁহাদের বহিঃ-চেতনায় থাকে—কিন্তু সৃষ্টিপ্রেরণার আবেশকালে সে সংস্কার লুপ্ত হয়। তাহার একটা উদাহরণ মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধকাব্য’। কবি পরম পাণ্ডিত্যসহকারে সর্ব্ববিধ আয়োজন করিয়া, উপাদান উপকরণ সংগ্রহ করিয়া মহাকাব্য ফাঁদিলেন; কিন্তু দেখা গেল, তাহা সেই সংজ্ঞা-অনুযায়ী বস্তু হয় নাই, তাহা মহাকাব্য নয়, গীতিকাব্যও নয়—তাহা একখানি উৎকৃষ্ট কাব্য মাত্র। তাহাই হয়,—এবং না হইলে বুঝিতে হইবে, সেই কবি-প্রেরণাই সত্য নহে। এই জন্য আধুনিক সমালোচকেরা কাব্য-সমালোচনায় এইরূপ মধ্যযুগীয় পদ্ধতি বর্জ্জন করিয়াছেন। যাহা নিয়তিকৃতনিয়মরহিত তাহার সম্বন্ধে কোনও বহির্গত আদর্শ বা সংজ্ঞা খাড়া করিলে, কাব্য-বিশেষের যে অন্যসাধারণত্ব তাহার প্রধান রস-প্রমাণ, তাহাকেই অগ্রাহ্য করিতে হয়। অতএর পূর্ব্ব হইতে একটা নাম খাড়া করিয়া, এবং সেই নামীয় বস্তুর লক্ষণ কি হইবে তাহা নির্দ্দেশ করিয়া, কোনও খাঁটি রস-রচনাকে বিচার করিতে বসা—সমালোচনা-রীতির এই উন্নতির যুগে শুধুই বেরসিকতা নয়, মূর্খতাও বটে।

 তোমার কথা কি? উপন্যাসের প্রতিষ্ঠাভূমি হইবে বাস্তব জীবন? কথাটার মধ্যে দুইটা মিথ্যা বা মূর্খতাসুলভ সংস্কারের প্রমাণ রহিয়াছে। পূর্ব্বে বলিয়াছি, রসসৃষ্টির কোনও বাঁধা-ধরা সংজ্ঞা-নির্দ্দিষ্ট রূপ নাই— উপন্যাস বলিয়া যদি কোনও রচনাকে নির্দ্দেশ করিতে হয়—সে তোমারই নিজের সুবিধার জন্য, তাহার জন্য কবি দায়ী নহেন। তারপর, যদি ‘উপন্যাস’ শব্দটি ব্যবহারই করিতে হয়, তবে সর্ব্বকালের সকল রকমের