উপন্যাস-কাব্য মনে করিয়া—ভাব ও রূপ, বিষয়-উপাদান ও আকারভঙ্গির যত বৈচিত্র্য আছে এবং আরও হওয়া সম্ভব, এবং সেই সঙ্গে কবির স্বতন্ত্র মৌলিক রস-দৃষ্টির বিশিষ্ট প্রয়োজন চিন্তা করিয়া—উপন্যাসবিশেষের লক্ষণ নির্ণয় করিতে হইবে। ইংরেজীতে এই ধরনের গদ্য কথা-কাব্যের নানা অভিধা থাকিলেও একটি সাধারণ নাম ব্যবহৃত হইয়া থাকে—‘ফিক্শন’। তাহার কারণ স্পষ্ট; সকলে এক জাতীয় না হইলেও তাহাদের মধ্যে একটা রূপ-সামান্য আছে। এইরূপ সংজ্ঞা-নির্ম্মাণও বিচার-সৌকর্য্যের জন্য; নতুবা, কবির সৃষ্টি প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্র, তাহাদের কোনও জাতি নাই। আধুনিক সমালোচনা-বিজ্ঞান জাতি ধরিয়া কোনও রস-রচনার বিচার করে না—কেন করে না, তাহার একটু আভাস মাত্র এখানে দিলাম, সুধী রসিক মাত্রেই বাকিটা বুঝিয়া লইবেন। অতএব বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস বলিতে আমরা একজন বিশিষ্ট কবি-ব্যক্তির বিশিষ্ট প্রেরণার বিশিষ্ট রূপের বা ছাঁচের—সৃষ্টি বুঝিব; তাহাকে উপন্যাস বলিতে হয় বল, না বলিলেও কিছুমাত্র হানি নাই; বরং তাহাতে রস-প্রমাণের বাধা আরও অল্প ঘটিবে। বঙ্কিমের উপন্যাসগুলি বঙ্কিমী গদ্যকাব্য—তাহার রূপ তাহারই, আর কাহারও সহিত তাহার সগোত্রতা থাকিতে পারে না; কারণ, অন্যতর কবিও স্বতন্ত্র, তাঁহার সৃষ্টিও তদ্জাতীয়; তাহার সমজাতি অন্য কোনও উপন্যাস পূর্ব্বে ছিল না, পরেও হইবে না। ইহাই রসবিচারের গোড়ার কথা।
বঙ্কিমের সেই সৃষ্টি যদি সার্থক রস-পরিণতি লাভ না করিয়া থাকে, তবে তাহা ‘উপন্যাস’ হয় নাই বলিয়া নহে—তাহারই নিজস্ব প্রেরণা রা ভাব-প্রকৃতিকে সে লঙ্ঘন করিয়াছে বলিয়া। যাহারা উপন্যাস বলিতে