পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৪৫

অতি-আধুনিক কোনও আদর্শের দোহাই দেয়, এবং তাহারই মাপকাঠিতে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসকে মাপিয়া তাহার রস-বিচ্যুতি প্রমাণ করিতে চায়, তাহারা শুধুই বেরসিক নহে, মূর্খও বটে। কারণ, রসবিচারের পদ্ধতি সম্বন্ধেই তাহারা অজ্ঞ। গোলাপ বাঁধাকপি হইল না, কাব্য ইতিহাস হইল না—বলিয়া যাহারা তর্ক উত্থাপন করে, তাহারা ফুলের বাগানে ফলের গাছ দেখিতে না পাইয়া, বা অর্কিড্-হাউসে লাল-নীল মাছের চৌবাচ্চা না দেখিয়া, নিরাশ হইয়া নিজেদেরই রুচি ও রসবোধের অভ্রান্ত পরিচয় দেয় মাত্র। বঙ্কিমের উপন্যাস শরৎচন্দ্রের বা রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস নহে; অতি-আধুনিক সাইকলজি, সেক্সলজি, বায়োলজি বা সোশিয়োলজি-মূলক রস-প্রবন্ধও নহে। রসকে যাহারা কোনও যুগ-মনোবৃত্তির—কোনও ব্যক্তি বা সম্প্রদায়বিশেষের তত্ত্ব-বুদ্ধির—সংস্কারে সংস্কৃত করিয়া তবে স্বীকার করিয়া লয়, তাহারা সাহিত্য, অর্থাৎ যাহা সর্ব্বকালের সর্ব্বমানবের রসপিপাসা মিটাইবার উপায়, তাহার চর্চ্চা না করিয়া দর্জ্জীর দোকান খুলিয়া নিত্য-নূতন পোষাকের ফ্যাশন সম্বন্ধে তাহাদের ফতোয়া জারি করিলে তবু একটা কাজ হয়—আধুনিকত্ববিলাসী বাবুদের মনোরঞ্জন করিয়া জীবন সার্থক করিতে পারে।

 জানি, এ কথাটাও ছিদ্রহীন হইল না। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস উপন্যাসই হউক বা আর যাহাই হউক, তাহার মধ্যে উপাদান-বৈষম্যহেতু রস-বিরোধ ঘটিয়াছে। অর্থাৎ, তিনি যে সব চরিত্র ও ঘটনার উপাদানে এই সকল গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন, তাহাতে বাস্তবের ভান আছে, অথচ তাহা বাস্তব-অনুকারী নহে। অভিযোগটা মারাত্মক বটে। বাস্তবের কথা বলিলে তো আর কথাটি কহিবার জো