পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৪৭

অথবা ‘নিখিলেশে’র স্ত্রীর মত বন্ধুর সঙ্গে প্রকাশ্যেও প্রেম করিত, তাহাতে কষ্ট পাইবার মত ক্ষুদ্র অশিক্ষিত জীব আমি নহি। চরিত্রনীতির কোনও দুর্ব্বলতাই নাই, তাই কোনও সংশয় বা আধ্যাত্মিক সঙ্কট আমাকে কিছুমাত্র বিচলিত করিতে পারে না। তিন পয়সার চাকরি বা পাঁচ পয়সার ঘুষে আমি আত্মবিক্রয় করিয়া থাকি; এক কাপ চায়ের জন্য ধনী বন্ধুর আড্ডায় মোসাহেবি করিতে কিছুমাত্র সঙ্কোচ বোধ করি না; কিন্তু সেই আমি বিশ্বমানব ও বিশ্বসাহিত্যের অতি-উচ্চ আদর্শ কেমন উপলব্ধি করিতে পারি! জীবন-রস-রসিকতার এই যে আধুনিক কৌশল, ইহা বঙ্কিমের সেকেলে কল্পনার অগোচর। তাই, এই অতি সরস বাস্তবতা উপেক্ষা করিয়া বঙ্কিমচন্দ্র কি উপন্যাসই লিখিয়াছেন! সন্ন্যাসী হইতে চায়! কোন্ দুঃখে? মানুষের দেহে বা প্রাণে জুতার আঘাত এমনই কি অসহ্য হইতে পারে যে, মানুষ খুন করিবে বা সন্ন্যাসী হইয়া যাইবে? আর সন্ন্যাসী হওয়া? হিন্দুর ছেলে কোনও কারণে সন্ন্যাসী হইয়া যায়, ইহাও কি বাস্তব? বঙ্কিম উপন্যাস লেখেন নাই—কারণ, বাস্তব জীবনের কথা লইয়াই উপন্যাস, এমন গাঁজাখুরি গল্প সে নয়।

 খুব সত্য কথা! ইহার উত্তর দিবার চেষ্টা করাই বাতুলতা। এমন গভীর বাস্তব-রস-রসিকতার মুখে বঙ্কিমের উপন্যাস তো ঐরাবত হইলেও ভাসিয়া যাইবে। রসের তর্কে হার মানিলাম; কিন্তু প্রশ্ন উঠিতেছে, বাস্তব জিনিসটা কি? দার্শনিক তর্ক না তোলাই ভাল—সেখানে কোনও উত্তরই মিলিবে না। কারণ, বাস্তবের এই ‘বস্তু’ যে কি, তাহার স্বরূপ এ পর্য্যন্ত উদ্ঘাটিত হয় নাই; সর্ব্ব রহস্যের মূল রহস্য তাহাই, আজও তাহারই সন্ধানে কত নূতন তত্ত্বের উদ্ভাবনা হইতেছে। দর্শনের কাজ