পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
বিবিধ কথা

তাই আজিও ফুরায় নাই—কখনও ফুরাইবে না। ঋষির দিব্য-দৃষ্টি তাহাকে দেখিয়াছে বলিয়া দাবি করে, কিন্তু কাহাকেও তেমন করিয়া দেখাইতে পারে না—অথবা, দেখিবার সেই শক্তি কেবল ঋষিরই আছে। কবি এই বাস্তবেরই রসরূপ উপলব্ধি করিয়া তাহাই যে উপায়ে প্রকাশিত করেন, সেই উপায়গুলিই বিবিধ কলা-কৌশল নামে অভিহিত হইয়া থাকে। কিন্তু সেও বাস্তবের বস্তুরূপ নয়—রস-রূপ; এবং সে রূপ এক নয়—বহু; কাজেই তাহার কোনও নির্দ্দিষ্ট সংজ্ঞা নাই, মানুষের মনোবৃত্তি তাহাকে ধরিতে পারে না—এমন কি, তাহার সেই বৈচিত্র্য বা বহুরূপই তাহার স্বরূপের একমাত্র আভাস। বস্তুর সেই তত্ত্ব—সেই ‘burden of the mystery' কবিকল্পনায় যে-রূপে ধরা পড়ে, তাহাই কাব্য; এবং এই কবি-দৃষ্টি যে রচনায় নাই তাহা সাহিত্যিক সৃষ্টি-নামের অযোগ্য। অতএব, যেখানে রস-বিচারই মুখ্য অভিপ্রায়, সেখানে বাস্তব-অবাস্তবের প্রশ্নই অবান্তর। বরং, বস্তুসকলের অন্তর্নিহিত এবং অপরোক্ষ অনুভূতি-গোচর যে বাস্তবতা—রস-সৃষ্টিতে সেই বাস্তবতাই ফুটিয়া উঠে বলিয়া রসিকচিত্ত গভীরভাবে আশ্বস্ত হয়। এই বাস্তবতা ব্যবহারিক জীবনের অভিজ্ঞতার মানদণ্ডে যাচাই করিবার নয়। রসলোক বা কাব্যজগৎ এই ব্যবহারিক জগতেরই একটা মানস-প্রতিচ্ছবি নয়, তাহার অবাস্তবতা-প্রমাণে সে জগতের সাক্ষ্য চলে না। কোনও গদ্য বা পদ্য-কাব্য এইরূপ বাস্তবতার গুণেই যেমন উৎকৃষ্ট সৃষ্টি নয়, তেমনই তাহার অভাবেই, উৎকৃষ্ট কাব্য নহে। জীবনকে যে-ভাবে ইচ্ছা দেখিবার স্বাধীনতা কবিমাত্রেরই আছে—তথাকথিত বাস্তবেরই অবাস্তব-রমণীয়তা সৃষ্টি করিবার অধিকার যেমন তাঁহার আছে, তেমনই অবাস্তবকেও আমাদের রসচেতনার পরিধির মধ্যে আনিয়া এবং তাহার