যে কাব্য বাস্তব ও অবাস্তবের প্রাকৃত-সংস্কার লোপ করিয়া দেয়, পাঠকচিত্তে বাস্তব-বুদ্ধিকে দমন করিয়া, সকল বিরোধ বা দ্বন্দ্ব হইতে তাহাকে নিষ্কৃতি দেয়—সেই উপন্যাস কাব্যগুণে, অর্থাৎ রসসৃষ্টিহিসাবে তত উৎকৃষ্ট। ঘোড়ার পিঠে দুইখানা পাখা বসাইয়া দিলে কিছুমাত্র দোষ হয় না—যদি সেই কাব্যে পক্ষবান ঘোড়াকে সত্যকার জীবন্ত ঘোড়া বলিয়া বিশ্বাস করিতে কোনও বাধা না পাই। এই যে “suspension of disbelief”—পাঠকের স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ—ইহাই কবির যাদুশক্তির প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আমি যে জগৎ সৃষ্টি করিতেছি, তাহার বিধান আমারই বিধান; আমার কল্পনা বস্তুকে রূপান্তরিত করিয়া, সম্ভব-অসম্ভবের সকল প্রাচীর লঙ্ঘন করিয়া, তোমার প্রত্যক্ষ পরিচিত জগৎকেও উল্টাইয়া ধরিয়া—মূককে বাচাল করিয়া, পঙ্গুকে গিরি-লঙ্ঘন করাইয়া, বীরকে কাপুরুষ ও কাপুরুষকে বীর করিয়া, নদীকে সাগর করিয়া, বাঙালী পল্লীবধূর পায়ের মলের আঘাতে ঘোড়া ছুটাইয়া, কিংবা তাহার মুখরতায় শাহান-শা বাদশাহকে পর্য্যন্ত পরাস্ত করাইয়া—যে কাব্য নির্ম্মাণ করিবে, তাহাই আরও সত্য, আরও বাস্তব। যদি তাহা না হয়, তবে, হয় তুমি রসাস্বাদনের অধিকারী নও, নয়, আমারই শক্তির অভাব আছে; কিন্তু তাহার বিরুদ্ধে তোমার এই বাস্তব-জগতের সাক্ষ্য নিতান্তই অপ্রযুক্ত ও হাস্যকর;—এমন কথা বলিবার অধিকার যে কোনও কবির আছে।
আমি বলিয়াছি, যুক্তি-তর্কের যে বাস্তব—তাহা কাব্যসৃষ্টির বাস্তব নহে। কিন্তু তত্ত্বের দিক দিয়াও যুক্তি-তর্কের বাস্তব নির্ভরযোগ্য নয়। মানুষের জীবনই ধরা যাক। সাধারণ মনুষ্য-জীবন বা ব্যক্তিজীবন সম্বন্ধে আমাদের কোনও ধারণা সম্যক্ বা সম্পূর্ণ নয়। জীবনের