সুখ ও দুঃখ, পাপ ও পুণ্য, ব্যর্থতা ও সফলতা—এ সকলের স্বরূপ-নির্ণয় বা স্থির-সিদ্ধান্ত আমাদের বুদ্ধির অতীত। সুখ-দুঃখের আপেক্ষিক মূল্য, অবস্থা ও চরিত্র-বিশেষে তাহার জমাখরচের হিসাব, কে কবে ঠিক করিয়া দিতে পারিয়াছে? পাপ ও পুণ্য দুই-ই তত্ত্বহিসাবে যাহাই হউক—তথ্য হিসাবে সত্য; কারণ, পাপ ও পুণ্য-বোধ মানুষের চেতনায় সর্ব্বদা বিদ্যমান আছে— সুস্থ ও সহজ মানুষের সংস্কারে তাহা দৃঢ়বদ্ধ হইয়া থাকে। কিন্তু এই পাপ-পুণ্যের সার্ব্বজনীন কোনও নিরিখ নাই। মানুষের মনুষ্যত্ব বলিতে আমাদের যে একটা সাধারণ ধারণা আছে তাহাও বাস্তব নহে; কারণ, প্রত্যেক মানুষই অপর হইতে ভিন্ন, অতএব প্রতিপদে মনুষ্যত্বের সেই সংজ্ঞা কোনও না কোনও অসাধারণ লক্ষণের সম্মুখে মিথ্যা হইয়া পড়ে। ভাল করিয়া দেখিতে জানিলে, জীবন ও জগৎঘটিত কোনও কিছুর বিষয়ে তুমি বাস্তবের একটা মাপকাঠি খুঁজিয়া পাইবে না। আবার প্রত্যেক মানুষের জগৎ তাহারই নিজস্ব প্রকৃতি, সংস্কার ও বোধশক্তির ফলে একটা স্বতন্ত্র জগৎ। তাই রসিক ও ধ্যানী যাঁহারা, তাঁহারা এই কারণেই কখনও বস্তুর বাস্তবতার মোহ স্বীকার করেন না। কবির কাব্যে এই তথাকথিত বাস্তব—অজ্ঞানীর পক্ষে যাহা সত্য, এবং জ্ঞানীর চক্ষে যাহা আদি-অন্তহীন সংশয়সঙ্কুল একটা বিরাট ধাঁধা, এবং সেই কারণেই অর্থহীন, নীতিহীন—তাহাই কেবলমাত্র একটি রসরূপের ইঙ্গিতব্যঞ্জনায় সকল সংশয়ের—সমাধান নয়—লোপ করিয়া, বাস্তব-মুক্তির আনন্দ দান করে। যাহারা সে আনন্দের অধিকারী বা প্রার্থী নহে, তাহারা তাহাকে বিশ্বাসই করে না—তাহারা ভিন্নজাতি, ভিন্নধর্মী। বৈষ্ণবের বিরুদ্ধে শাক্তের, বৈদান্তিকের বিরুদ্ধে ঈশ-বাদীর, হিন্দুর বিরুদ্ধে খ্রীষ্টানের
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৫১
