পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অতি-আধুনিক সমালোচক ও বঙ্কিমচন্দ্র
৫৩

‘ক্যালিবানে’র মত অনাসৃষ্টিও অপূর্ব্ব সৃষ্টি হইয়া উঠিয়াছে। বাস্তবতার সাধারণ প্রাকৃত মাপকাঠি দিয়া বিচার করিলে এ সকল গাঁজাখুরির সমর্থন করিবে কে? তাই বলিয়া শেক্‌স্‌পীয়র কি জগৎ ও জীবন—মানুষের চরিত্র বা হৃদয়রহস্যকে তাহার সমগ্র বাস্তবতায় মণ্ডিত করিতে পারেন নাই? এই বাস্তবতার প্রমাণ অন্যরূপ। মানুষের মধ্যে যে সহজ মনুষ্যত্ব আছে, তাহারই গভীরতর চেতনা রসিকের রস-বোধের মধ্যে জাগ্রত হইয়া থাকে; জগতের যাহা-কিছু তাহার বাস্তব-স্বরূপ— তাহা এইরূপ গভীরতর চেতনার সহায়ে রসিকের হৃদয়গোচর হয়, সেখানে ফাঁকি চলে না। যাহা অবাস্তব, তাহা সেই চেতনার প্রবেশ-দুয়ারে বাধা পায়। কবির সৃষ্টি যেমন সমগ্র-দৃষ্টির ফল, তেমনই কাব্যরস আস্বাদনে রসিকেরও সেই সমগ্র-দৃষ্টি আবশ্যক। এই রসদৃষ্টি লাভ করিতে হইলে, অর্থাৎ যথার্থ রসিক হইতে হইলে, ‘genuine being’ হইতে হইবে। খণ্ড ক্ষুদ্র সঙ্কীর্ণ সংস্কার বা কতকগুলা অসংলগ্ন চিন্তাপ্রসূত মতবাদের দর্পণে এই বাস্তব-রূপ প্রতিবিম্বিত হয় না। এইরূপ অবাস্তবতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের জাতীয় মহাকবি, মহানাট্যকার গিরিশচন্দ্রের নাটকগুলিতে প্রায়শই দৃষ্টিগোচর হয়। মানব-জীবন বা চরিত্রের যে রূপ তাঁহার নাটকে চিত্রিত হইয়া থাকে, তাহাকে অতিচারী কল্পনার মহামহোৎসব বলা যাইতে পারে। ‘প্রফুল্ল’-নাটক বাঙালী রসিক-সমাজের বড়ই প্রিয়; কিন্তু এই নাটকের অভিনয় দেখিবার কালে যে মানুষের অন্তরতম মনুষ্যত্ব বিদ্রোহী না হয়, সে খাঁটি বাঙালী হইতে পারে, কিন্তু খাঁটি মানুষ নয়। মানুষকে সু এবং কু-রূপে চিত্রিত করিতে গিয়া এই ভাবাতিরেকগ্রস্ত নাট্যকার যে আতিশয্যকে অভিনয়-সাফল্যের একমাত্র উপায় করিয়া, মানুষের মনুষ্যত্বকে যে ভাবে