পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
বিবিধ কথা

লাঞ্ছিত এবং অপমানিত করিয়াছেন তাহা বাংলা রঙ্গমঞ্চের আদর্শ নাট্যকলা বলিয়া অভিহিত হইতে পারে, কিন্তু এইরূপ রচনাই কাব্যগত অবাস্তবতার চরম নিদর্শন। ইহাতে কল্পনার সত্য নাই; যে সত্য ঘটনাগত বাস্তবেরও বহু ঊর্দ্ধে, যে বাস্তবতার গভীরতম উপলব্ধির জন্য রসিকচিত্ত আকূল, এবং যাহার জন্য কবির নিকটে তাহারা কৃতজ্ঞ, সেই সত্য, সেই বাস্তবতা যে কি—এই সকল রচনায় তাহার একান্ত অভাবই সে সম্বন্ধে আমাদিগকে আরও সচেতন করিয়া তোলে।

 নাটকই হউক, আর উপন্যাসই হউক, আর কাব্যই হউক—প্রাচীন হউক বা আধুনিক হউক, তথাকথিত realistic হউক বা idealistic হউক—সাহিত্যের রসবিচারের পদ্ধতি সর্ব্বত্রই এক। কবির কল্পনা আপন প্রয়োজনে উপাদান সংগ্রহ করে, এবং নিজস্ব দৃষ্টি অনুযায়ী রূপ-সৃষ্টি করে। এজন্য উপাদান যেমনই হউক, সেই রূপ বা form-ই কাব্যের সর্ব্বস্ব,—content তাহার সহিত অভিন্ন, একাকার হইয়া থাকে। উপাদানগুলিকে বিশ্লিষ্ট করিয়া, পৃথকভাবে তাহার মূল্য যাচাই করিয়া, কোনও কাব্যের রসরূপ—যাহা সমগ্রতায় সমাহিত হইয়া থাকে—তাহাকে বিচার করা চলে না। বাংলা-সাহিত্যে সমালোচনার জন্ম আজিও হয় নাই, তাই যাহারা রসিক নয়, বিদ্বানও নয়—তাহাদের দায়িত্বহীন ও নির্লজ্জ আত্ম-ঘোষণায় সমালোচনার ভবিষ্যৎও বিঘ্নসঙ্কুল হইয়া উঠিতেছে। আত্মঘোষণা বলিলাম এই জন্য যে, ইহারা সাহিত্যের ধার ধারে না—সাহিত্য-সমালোচনার অজুহাতে কতকগুলা দুঃসাহসিক উক্তি করিয়া পাঠক-সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাই, বিগত শতাব্দীর বাংলা-সাহিত্য—যাহা বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ কীর্ত্তি, এবং সেই সাহিত্যের যিনি অবিসংবাদিত শ্রেষ্ঠ কবি-পুরুষ, তাঁহাকে লইয়া বপ্রক্রীড়া