রামমোহন-শতবার্ষিক-উৎসব হইয়া গেল, বক্তৃতামঞ্চে ও সংবাদপত্রে ক্ষণকালের জন্য বাংলা দেশ রামমোহনের নামকীর্ত্তনে মুখরিত হইয়া উঠিল। রামমোহন যুগ-প্রবর্ত্তক মহাপুরুষ, গত এক শত বৎসর ধরিয়া বাঙালী জাতির যে দিকে যাহা কিছু উন্নতি হইয়াছে, সে সকলের মূলে একা রামমোহন—এই কথাটাই বাঙালীকে স্মরণ করাইয়া দিবার একটা প্রচণ্ড প্রয়াস আমরা দেখিলাম; কারণ এ উৎসব কেবল স্মৃতিউৎসব নয়, ইহা রামমোহনের রাজ্যাভিষেক-উৎসবও বটে—সমগ্র বাঙালী শিক্ষিত সমাজ রামমোহনের রাজচক্রবর্ত্তিত্ব একরূপ স্বীকার করিয়াছে, এদিক দিয়া অনুষ্ঠাতৃবর্গের মনস্কামনা পূর্ণ হইয়াছে। এই উৎসবে শিক্ষিত সমাজের দিগ্গজগণ পড়াপাখির মত যে ধরনের আলোচনা ও গবেষণার পরিচয় দিয়াছেন, তাহাতে, বহুদিন পূর্ব্বে শ্রীযুক্ত অরবিন্দ ঘোষ মহাশয় যে একটি কথা বলিয়াছিলেন তাহাই বার বার আমার মনে পড়িয়াছে—সে কথাটি এই যে, বাঙালী জাতির সম্বন্ধে সর্ব্বাপেক্ষা আশঙ্কার কারণ, বাঙালী চিন্তা করিবার শক্তি হারাইয়াছে। গড্ডালিকাবৃত্তির এমন পরিচয় বাঙালী ইতিপূর্ব্বে আর কখনও দেয় নাই।
রামমোহন রায় একজন অসাধারণ পুরুষ, শিক্ষিত বাঙালী মাত্রেই ইহা স্বীকার করিবে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজের—যে সমাজকে বাংলার জাতীয় সমাজ বলা যায়—সেই বিরাট হিন্দুসমাজের নানা ক্ষেত্রে এমন বহু মনীষী ও অসাধারণ প্রতিভাশালী ব্যক্তির