পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রামমোহন রায়
৫৯

আধুনিককালের কোনও একজন ব্যক্তির শিষ্যত্ব স্বীকার করাইতে হইলে, প্রথমে প্রমাণ করা আবশ্যক যে, এই জাতি তাহার পূর্ব্ব সাধনা ও ঐতিহ্য, তাহার যুগান্তরাগত ঋক্‌থ পরিত্যাগ করিয়া সম্পূর্ণ আধুনিক ভাবাপন্ন হইয়াছে; সে তাহার পৈতৃক সকল সম্পত্তি তুচ্ছ করিয়া কেবল উপনিষদ-বেদান্তের এক অভিনব ভাষ্যকেই সভ্য ও ভদ্র বলিয়া গ্রহণ করিয়াছে। প্রমাণ করিতে হইবে যে, রামমোহনের পরে আর কেহ সেই অতীতকে আর কোনও রূপে উদ্ধার করিয়া ভিন্নতর আদর্শে এই জাতির নবজন্মবিধানে সহায়তা করেন নাই।

 পূর্ব্বে বলিয়াছি, গত শতাব্দীর বাংলার ইতিহাস এখনও ভাল করিয়া আলোচিত হয় নাই; শিক্ষিত সমাজ এখনও সে বিষয়ে অজ্ঞ; এই অজ্ঞতার সুযোগ লইয়া অতিশয় দায়িত্বহীন উক্তি বা অত্যুক্তি করিলে কোনও স্থায়ী ফল হইবে না। ইহা ছাড়া, রামমোহনের জীবনবৃত্ত যাহা প্রচলিত আছে, তাহা যে নির্ভরযোগ্য নয়, এমন আশঙ্কার কারণ আছে। যে সমাজ তাঁহাকে এতকাল আপন কুক্ষিগত করিয়া রাখিয়াছে—হিন্দুর সাধনা-ধারণার প্রতি একটা উদ্ধৃত অবজ্ঞার মনোভাব এবং সাম্প্রদায়িক মতবাদের দ্বারা তাঁহার প্রকৃত পরিচয়কে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে, আজ এতকাল পরে রামমোহনের সেই অযথার্থ ও অনৈতিহাসিক মূর্ত্তিকে পূজা করিবার জন্য সমগ্র দেশবাসীকে আহ্বান করা সেই সমাজের পক্ষে, আর যাহাই হউক—সততার কার্য্য নহে। সত্যকার রামমোহনকে তোমরা বুঝিতে দিবে না—জাতীয় জাগৃতির বহুমুখী সাধনার ক্ষেত্রে অন্যান্য মহাপুরুষগণের মধ্যে তাঁহার স্থান কোথায়, সে ঐতিহাসিক বিচার তোমাদের মনঃপুত নয়; আর কোনও হিন্দুর সাধনা, ত্যাগ, চরিত্র ও প্রতিভার উল্লেখ পর্য্যন্ত