তোমাদের অসহ্য—এক কথায়, জাতির দিক দিয়া, বৃহত্তর সমাজের সার্ব্বজনীন ভাব-অভাবের দিক দিয়া, রামমোহনের মনীষা ও কৃতিত্বের বিচার তোমাদের অভিপ্রেত নয়। কাজেই বলিতে হয়, যে রামমোহনকে তোমরা খাড়া করিয়াছ, সেই রামমোহন একটা ভক্তি বিগ্রহ; তাহাকে পূজা করিয়া জাতির, ইহলৌকিক বা পারলৌকিক, কোনও কল্যাণ হইবে না।
রামমোহনের যুগ ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্দ্ধ মাত্র; ১৮১৪ হইতে ১৮৩০ খ্রীষ্টাব্দ পর্য্যন্ত রামমোহনের কীর্ত্তিকাল। এই কালেই আমরা তাঁহাকে একজন বিশিষ্ট বাঙালী মনীষীরূপে প্রত্যক্ষ করি। জাতি তখনও নিদ্রাচ্ছন্ন, কিন্তু জাগিবার বিলম্ব নাই; রামমোহন পূর্ব্বেই জাগিয়াছেন—ইহাই রামমোহনের গৌরব। কিন্তু রামমোহনই আর সকলকে জাগাইলেন, তাঁহারই জাগরণী-মন্ত্রে সকলে জাগিয়াছিল, কেহ স্বতঃ জাগরিত হয় নাই—এ কথা যাঁহারা বলেন, তাঁহারা জাতির কথা বলেন না, সম্প্রদায়ের কথা বলিয়া থাকেন। তাঁহাদের উক্তি কতকটা এইরূপ। রাজা রামমোহন যেটুকু জাগাইয়াছেন, এ জাতি ঠিক ততটুকু জাগিয়াছে; হিন্দু বাঙালী-সমাজে—ধর্ম্মে, সমাজে, রাষ্ট্রে ও সাহিত্যে—যে জাগরণ-চিহ্ন দেখা যায়, তাহার যতখানি রামমোহননিরপেক্ষ ততখানিই তুচ্ছ; কারণ, তাহার মূলে পৌত্তলিকতা রহিয়াছে। ইহার উত্তরে বলা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর নব-জাগরণের ইতিহাস বাঙালী হিন্দুজাতির নব অভ্যুত্থানের ইতিহাস; তাহার মূলে খ্রীষ্টান অথবা আর কোনও ধর্ম্মমতের দংষ্ট্রাদীপ্তি নাই। এই জাগৃতির মূলে যদি কোনও শক্তি কাজ করিয়া থাকে, তবে তাহা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব। এই প্রভাব, জাতির বিশিষ্ট ভাব প্রকৃতির সহিত ক্রমান্বয়