পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
বিবিধ কথা

পৌত্তলিকতা হিন্দুর ধর্মসাধনায় নানারূপে, নানাভাবে ও ভঙ্গিতে স্ফুটতর হইয়া হিন্দুর হিন্দুত্বের সহিত ওতপ্রোতভাবে জড়িত হইয়া আছে; যাহার তত্ত্ব, চিন্তাশীল মনীষী, ভাবুক কবি, ত্যাগী মহাপুরুষ অথবা ধর্ম্মপরায়ণ সাধু কেহই মিথ্যা বলিয়া পরিত্যাগ করেন নাই; যাহার পশ্চাতে শত শত বৎসরের জনকল্যাণ-চিন্তা সংহত হইয়া রহিয়াছে—তাহাকে একেবারে অস্বীকার করাও যা, আর হিন্দুকে তাহার স্ব-প্রকৃতি পরিবর্ত্তন করিতে বলাও তাই। সহস্র বৎসরের সাধনা ও তত্ত্বচিন্তার ফলে হিন্দু যে আধ্যাত্মিক দৃষ্টি লাভ করিয়াছে, তাহার সাধন-মার্গ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র; তথাকথিত পৌত্তলিকতা হিন্দুর হিন্দুত্বের নিদান। প্রতিমা-পূজাই সে পৌত্তলিকতার সার সত্য নয়, তাহার তত্ত্ব আরও গূঢ়, আরও গভীর। প্রতীক-উপাসনা যদি অতি স্থূল ও আধ্যাত্মিকতাবর্জ্জিত প্রতিমাপূজায় পরিণত হইয়া থাকে, তবে তাহার পরিবর্ত্তে কোনও অহিন্দু উপাসনা-পদ্ধতি প্রবর্ত্তন করিলে, ধর্ম্মসংস্কার নয়—ধর্ম্মান্তর গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। হিন্দুর পৌত্তলিকতা কাঠপাথরের পূজা নয়, হিন্দুর সাকারতত্ত্ব পাশ্চাত্য Paganism নয়। ব্রহ্মস্বরূপের যে ধারণা হিন্দু-প্রতিভার সর্ব্বশ্রেষ্ঠ কীর্ত্তি, কেবল মানসবিলাসের উপকরণ হিসাবে নয়—সাধনার ক্ষেত্রে তাহা উপলব্ধি করিতে হইলে সোপান-পরম্পরার প্রয়োজন; নতুবা সে তত্ত্ব তত্ত্বই থাকিয়া যায়, সাধনীয় হইতে পারে না। ‘যতো বাচো নিবর্ত্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ’ তাহাকেই—অর্থাৎ, একেশ্বরবাদের অতিস্থূল ব্যক্তিজ্ঞানসাপেক্ষ উপলব্ধি নয়—সেই সর্ব্বসংস্কার-নিরপেক্ষ পরমতত্ত্বকে লাভ করিতে হইলে, তাহার দিকে মনকে শেষ পর্য্যন্ত মুক্ত রাখিতে হইবে; পৌত্তলিকতা সেই মুক্ত মনের ধর্ম্ম—সর্ব্বাশ্রয়ী ও সর্ব্বতোমুখী কল্পনার সহায়। সে