পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রামমোহন রায়
৬৫

ক্ষেত্রে নিরাকার একেশ্বরবাদের শাসন অত্যাচারী রাজশাসনের মতই পীড়াদায়ক। অতএব কোনও বিজাতীয় আদর্শ, বিশেষত হিন্দুর অতিশয় বিপরীত যে সেমীয় প্রকৃতি, তাহারই উদ্ভাবিত ধর্ম্মতত্ত্বের প্রভাবে যাহারা এই পৌত্তলিকতার মূলোচ্ছেদ করিতে চান, তাঁহারা সংস্কারকামী নহেন; তাঁহারা ব্যক্তিগত জ্ঞানাভিমানের বশে একটা জাতিকে স্বধর্ম্মচ্যুত করিবার প্রয়াসী। রামমোহন ধর্ম্মবিষয়ে যে মতই প্রচার করুন, তাহাতে কোনও ফল হয় নাই—হইতে পারে না বলিয়াই হয় নাই। তিনি নিজে কোনরূপ ধর্ম্মসাধনা করেন নাই——ধর্ম্মবিষয়ক চিন্তা করিয়া থাকিলেও এবং সেই চিন্তার একরূপ মানসিক উপভোগপদ্ধতি অবলম্বন করিলেও, তাঁহাকে পরম ভাগবৎ বলা যায় না। দেবেন্দ্রনাথ বা কেশবচন্দ্রের মত তাঁহার কোন ধর্ম্ম-বাতিক ছিল বলিয়া আমরা জানি না। এ হেন ব্যক্তির পক্ষে কোনও জাতির আধ্যাত্মিক পিপাসা পরিতৃপ্তির পথ, বা ভগবৎ-সাধন-প্রণালী নির্দ্দেশ করা অসম্ভব। তাঁহার সে অধিকারই ছিল না, এবং মনে হয়, তাঁহার সে উদ্দেশ্যও ছিল না। ব্রহ্মতত্ত্বের আলোচনা তিনি না করিলেই ভাল করিতেন। তিনি তাঁহার সেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অস্ত্রখানি সর্ব্বত্র চালনা করিয়া তাহার ধার পরীক্ষা করিয়া যে আত্ম-প্রসাদ লাভ করিতেন, তাহাতেই আমরাও মুগ্ধ; কিন্তু তাই বলিয়া তিনি যে এ জাতির ধর্ম্ম-সংস্কারক, তাঁহার সময় হইতে অনাগত যুগ ধরিয়া তিনিই যে এ জাতির ধর্ম্মগুরু, এমন হাস্যকর উক্তির প্রতিবাদ করিতেও আমাদের প্রবৃত্তি হয় না।

 রামমোহনের দ্বিতীয় কৃতিত্ব—সমাজ-সংস্কার। এ ধরনের একটি কাজই তাঁহার নামের সঙ্গে বিশেষ করিয়া যুক্ত হইয়া আছে—সতীদাহপ্রথার উচ্ছেদ। অস্পৃশ্যতা বা জাতিভেদের উচ্ছেদ, বাল্য-বিবাহ