নিবারণ, বিধবা-বিবাহ প্রচলন প্রভৃতির মত সমাজ-সংস্কার ইহা নহে; আমরা আরও জানি, রামমোহন এ ধরনের সমাজ-সংস্কারে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন না। সমাজ-সংস্কার করিতে হইলে সমাজের ভিতর হইতে তাহা করিতে হয়; আইন প্রণয়নের দ্বারা যে ধরনের সংস্কারকার্য্য হয়—তাহা পীড়িত সমাজদেহের একটা বাহ্যিক উপসর্গ দূর করা মাত্র। ইহার দ্বারা ব্যাধির মূলে হস্তক্ষেপ করা হয় না, সমাজের বিবেক বা হিতবুদ্ধির উদ্রেক্সাধন হয় না। সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদসাধনে তাঁহার যে উদ্যম তাহা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণীয়; কিন্তু তাহা সমাজ-সংস্কারের চূড়ান্ত নহে। সতীদাহ নিবারণ সত্ত্বেও সামাজিক সমস্যার সমাধান আজিও হয় নাই। বিধবা-বিবাহ প্রচলনের জন্য স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় যে উদ্যম, পরিশ্রম ও ত্যাগস্বীকার করিয়াছিলেন, তাহাতে, সে যুগে সমাজ-সংস্কারক হিসাবে রামমোহন তাঁহার পার্শ্বে বসিবার উপযুক্ত নহেন। সামাজিক সমস্যার দিক দিয়া বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রচেষ্টা অনেক বেশি মূল্যবান; তাহার প্রমাণ সতীদাহ অতীতের ইতিহাসগত হইয়া আছে, কিন্তু বিধবা-বিবাহ এখনও গুরুতর সমস্যারূপে বিদ্যমান। বিলম্বে সতীদাহ-প্রথা বোধ হয় আপনিই উঠিয়া যাইত, যেমন বহুবিবাহপ্রথা গিয়াছে; তৎসত্ত্বেও স্বীকার করি, এরূপ গর্হিত অনুষ্ঠান একদিনও সহ্য করা উচিত ছিল না—আইনের সাহায্যগ্রহণ ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু সমাজ-সংস্কার ব্যাপারে আইনের সাহায্য গ্রহণ উৎকৃষ্ট উপায় নয়—কোনও দেশহিতব্রতীই সেই পন্থার সমর্থন করিবেন না। এই জন্যই সতীদাহ-প্রথার নিবারণ যেমন ঠিক সমাজ-সংস্কার নয়— তেমনই তাহার উপায়টিও সমাজ-সংস্কারের উপযুক্ত পন্থা নয়। আজিও এ জাতির সর্ব্বশ্রেষ্ঠ জীবিত জননায়ক মহাত্মা গান্ধী তাঁহার বিপুল
পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৭৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
বিবিধ কথা
