আন্দোলনে রামমোহনের পন্থা অবলম্বন করেন নাই। অতএব সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রেও রামমোহন জাতির পথপ্রদর্শক বলিয়া কীর্ত্তিত হইতে পারেন না।
রামমোহনের পক্ষ হইতে আর এক দাবি এই যে, তিনিই নাকি সর্ব্বপ্রথম জাতির রাষ্ট্রীয় অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হইয়াছিলেন। এই ‘সর্ব্বপ্রথম’ কথাটি যেন একটি যাদুযন্ত্রের মত হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইতিহাস আলোচনা করিলে আমরা এমন অনেক তথ্যের সন্ধান পাই, যাহাতে অতিশয় নূতন ও মৌলিক বলিয়া পরবর্ত্তী কালে যাহা খ্যাতি লাভ করিয়াছে, তেমন কীর্ত্তিরও মৌলিকতা সন্দেহস্থল হইয়া পড়ে। হয়তো প্রভাবের কোনও সম্ভাবনা নাই—একটা দূর ও দৈব সাদৃশ্যমাত্র আছে, তথাপি, একটা আগে ও একটা পরে কেবল এই যুক্তির অনুরোধে আমরা অনেক সময়ে অবিচার করিয়া বসি। যদি একই যুগে কোনও একটা বিশেষ সাধনা উত্তরোত্তর প্রকট হইয়া উঠে, তাহা হইলে কে আগে ও কে পরে সেই সাধনা আরম্ভ করিয়াছেন, ইহাই বড় কথা নয়; বরং কাহার প্রতিভা প্রথমে ওই সাধনাকে সুনির্দ্দিষ্ট ও সত্যদৃষ্টিসম্পন্ন করিয়াছে, তাহাই দেখিতে হইবে। কালের একটা প্রভাব আছে—যুগ-প্রয়োজনের একটা তাগিদ আছে—যাহা শীঘ্রই হউক আর বিলম্বেই হউক সকলকে সজাগ করিয়া তোলে। পুষ্পোদ্গমের কাল আসন্ন হইলে সকল গাছেই ফুল ফোটে; বাগানের সবচেয়ে বড় ফুল সে-ই নহে—যে সকলের আগে ফুটিয়াছে। উপমাটা বোধ হয় ঠিক হইল না। ধরা যাক, কোনও পরিবারে একটি সন্তান সর্ব্বাগ্রে বর্ণ-পরিচয় শিখিয়াছে—সকলের আগে জন্মিয়াছে এবং কালক্ষয় করে নাই বলিয়া