এ জাতির হিতৈষী বহু দেশীয় ও বিদেশীয় মহাত্মার প্রতি অকৃতজ্ঞতার অপরাধে অপরাধী হইতে হয়।
রামমোহন সম্বন্ধে এইরূপ অর্দ্ধসত্য ও অত্যুক্তি চরমে উঠিয়াছে আর একটি কিম্বদন্তীর প্রচারে—রামমোহনই নাকি বাংলা গদ্যসাহিত্যের স্রষ্টা! ইহা কেবল অত্যুক্তি নয়, ইহা তথ্যঘটিত মিথ্যা। বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে এরূপ আরও কিম্বদন্তী আছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস না থাকায়, এবং সাহিত্যবিশারদ মহাপণ্ডিতগণের সাহিত্যজ্ঞান অতিশয় পরিপক্ব হওয়ায়, এইরূপ কিম্বদন্তী শিক্ষিত সমাজেও নির্ব্বিঘ্নে টিঁকিয়া থাকে। সাম্প্রদায়িক অন্ধভক্তি মানুষকে কতখানি অভিভূত করিতে পারে—তা সে মানুষ যতই বিদ্বান ও বুদ্ধিমান হউক—তাহার প্রমাণও ইহার মধ্যে আছে। রামমোহন বাংলা গদ্যরীতিতে কয়েকখানি পুস্তক ও পুস্তিকা রচনা করিয়াছিলেন, ইহা ঐতিহাসিক সত্য; কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সে সকল গ্রন্থের বিশেষ কোনও স্থান নাই, এ কথা বলিলে অন্যায় হইবে না। রামমোহন যে গদ্য লিখিয়াছিলেন, তাহা বাংলা গদ্যের রীতি ও তাহার ক্রম-পরিণামের ধারার সহিত সম্পর্কহীন। কেরী ও মৃত্যুঞ্জয়, বিদ্যাসাগর ও বঙ্কিম, প্রধানত এই চারিজন ব্যক্তির পরিশ্রম ও প্রতিভায় আধুনিক বাংলা গদ্যের প্রতিষ্ঠা হইয়াছে। যিনি বাংলা গদ্যের ক্রমবিকাশের ধারা লক্ষ্য করিবেন তিনি স্পষ্ট দেখিতে পাইবেন—কেমন করিয়া বাংলা গদ্যরীতি অতিশয় সরল রেখায় ক্রমশ পরিস্ফুট হইয়া উঠিতেছে; মৃত্যুঞ্জয়ের গদ্যরীতির সূত্রটি কেমন করিয়া বিদ্যাসাগরের গদ্যে সঞ্চালিত হইয়াছে; এবং বিদ্যাসাগরের রচনারীতি কেমন করিয়া বঙ্কিমচন্দ্রের গদ্যভাষার ‘খেই’ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই