পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
বিবিধ কথা

রীতিবিকাশের ধারায় রামমোহনের গদ্য কুত্রাপি চিহ্নরূপেও বিদ্যমান নাই। মৃত্যুঞ্জয় ঊনবিংশ শতকের প্রারম্ভ হইতেই বাংলা গদ্যের চর্চ্চা করিতেছিলেন; কাল হিসাবেও তিনি রামমোহনের অগ্রবর্ত্তী। রামমোহনের বাংলা রচনা ১৮১৪ খ্রীষ্টাব্দের পূর্ব্বে নহে। মৃত্যুঞ্জয়ের ‘বত্রিশ সিংহাসন’ রচিত হয় ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দে, এবং ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’র তারিখ ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দ। এই ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’য় নানা গদ্যরীতির নমুনা আছে; তন্মধ্যে একটি রীতি বিদ্যাসাগরের অব্যবহিত-পূর্ব্ব বাংলা গদ্যের রূপ বলিয়া নির্দ্দেশ করা যাইতে পারে। সকলেই জানেন, বাংলা গদ্যের প্রথম সুসম্পন্ন রূপ বিদ্যাসাগরের ভাষা। অতএব জিজ্ঞাস্য এই, বাংলা গদ্যরীতির গঠনে রামমোহনের স্থান কোথায়? আমি এ বিষয়ে অধিক আলোচনা নিষ্প্রয়োজন মনে করি, কারণ তথ্যের দিক দিয়া ইহা এতই অবিসংবাদিত যে, এ বিষয়ে কোনও তর্কের অবকাশ নাই।

 আরও প্রশ্ন এই—রামমোহন সাহিত্যিক ছিলেন কবে? যাঁহার মনে প্রাণে কোথায়ও সাহিত্যের অভিপ্রায় বা প্রেরণা ছিল না, তিনি সাহিত্য রচনা করিতে যাইবেন কেন? রামমোহন যে সকল গ্রন্থ লিখিয়াছিলেন, সেগুলির বিষয়-বস্তু ও রচনা-ভঙ্গি—তাহাদের content ও form—যাহাকে সাহিত্য বলে, তাহার ত্রিসীমানার বাহিরে। তাঁহার সে উদ্দেশ্যও ছিল না। এই ভাষা তাঁহারই ভাষা হইয়া আছে— তাহা গত যুগের বাঙালী সাহিত্যিকগণের কোনও উপকারে লাগে নাই; তাঁহাদের কেহই সাহিত্যিক কৌতূহলের বশবর্ত্তী হইয়া সেগুলির বিশেষ চর্চ্চা করিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয় না, অন্তত তাহার কোনও প্রমাণ নাই। রামমোহনের গ্রন্থগুলি লোপ পাইলে গত যুগের বাংলার