পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রামমোহন রায়
৭৩

ইতিহাস সংকলনে বিষয়বিশেষে ত্রুটি ঘটিতে পারে, কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সঙ্কলনে কোনও বাধা ঘটিবে না। কেহ কেহ বলিয়া থাকেন, রামমোহনই সে যুগের প্রথম লেখক—যিনি বাংলা গদ্যকে গুরুতর বিষয়ের বাহনরূপে ব্যবহার করিয়াছিলেন। যদি তাহাই হয় তবে বলিতে হইবে, এত বড় প্রেরণা সত্ত্বেও রামমোহন বাংলা গদ্যসাহিত্যের সৃষ্টি করিতে শোচনীয়রূপে অকৃতকার্য্য হইয়াছিলেন। বিষয়ের গুরুত্বই ভাষা বা সাহিত্যের উৎকর্ষ প্রমাণ করে না; যাঁহারা তাহা মনে করেন, তাঁহাদের সাহিত্যিক বোধশক্তি নিতান্তই অবজ্ঞার যোগ্য। সেকালের যে লেখক খেঁকশিয়ালীর গল্পও একটু ভাল করিয়া লিখিতে পারিয়াছেন, তিনিও ‘গোস্বামীর সহিত বিচার’ অথবা ‘বেদান্তসার’ প্রভৃতির লেখকের সহিত তুলনায় সাহিত্যিক হিসাবে শ্রেষ্ঠ।

 এই কিম্বদন্তীর প্রসঙ্গে একটা কথার উল্লেখ এখানে না করিয়া পারিলাম না। সাম্প্রদায়িক মনোভাব অথবা ব্যক্তিগত অন্ধ শ্রদ্ধা যে আমাদের দেশে কত দূর পর্য্যন্ত পৌঁছিতে পারে, তাহার দৃষ্টান্ত —রামমোহনের এই সাহিত্যিক প্রতিভার সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের নিঃসঙ্কোচ অত্যুক্তি। রামমোহন তাঁহার পিতার ধর্ম্মগুরু, সেই কারণে ‘রাজা’ রামমোহন সম্বন্ধে তাঁহার প্রকৃতিসুলভ আভিজাত্যাভিমান যে তাঁহাকে কিয়ৎপরিমাণে বিচলিত করিবে, ইহা আশ্চর্য্য নয়। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের বিচারকপদে আসীন হইয়া সেই সাহিত্যের শিরোমণি রবীন্দ্রনাথ রামমোহনকে লইয়া এত বাড়াবাড়ি করিলেন কেমন করিয়া? পাঠকদের অবগতির জন্য আমি রামমোহন সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি উক্তি তাঁহার এক প্রবন্ধ হইতে উদ্ধৃত করিতেছি।