জগতের ত্রাণকর্ত্তা বলিয়া যীশুখ্রীষ্টের সম্বন্ধে বোধ হয় মিশনারিগণ ইহার অধিক দাবি করেন না। রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন—
নব্যবঙ্গের প্রথম সৃষ্টিকর্ত্তা রাজা রামমোহন রায়ই বাংলাদেশে গদ্য সাহিত্যের ভূমি পত্তন করিয়া দেন।... রামমোহন যেখানে ছিলেন সেখানে কিছুই প্রস্তুত ছিল না, গদ্য ছিল না, গদ্যবোধশক্তিও ছিল না। সেই আদিমকালে রামমোহন পাঠকদের জন্য কি উপহার প্রস্তুত করিতেছিলেন? বেদান্তসার ব্রহ্মসূত্র উপনিষৎ প্রভৃতি দুরূহ গ্রন্থের অনুবাদ।...কেবল পণ্ডিতের নিকট পাণ্ডিত্য করা, জ্ঞানীদের নিকট খ্যাতি অর্জ্জন করা রামমোহন রায়ের ন্যায় পরম বিদ্বান ব্যক্তির পক্ষে সুসাধ্য ছিল। কিন্তু তিনি পাণ্ডিত্যের নির্জ্জন অত্যুচ্চ শিখর ত্যাগ করিয়া সর্ব্বসাধারণের ভূমিতলে অবতীর্ণ হইলেন, এবং জ্ঞানের অন্ন ও ভাবের সুধা সমগ্র মানবসভার মধ্যে পরিবেশন করিতে উদ্যত হইলেন। এইরূপে বাংলাদেশে এক নূতন রাজার রাজত্ব, এক নূতন যুগের অভ্যুদয় হইল।
রবীন্দ্রনাথের এই উক্তিগুলির কি অর্থ হয় দেখা যাক। ‘রামমোহন রায় নব্য বঙ্গের প্রথম সৃষ্টিকর্ত্তা’—তাহা হইলে রামমোহনের পরে আরও সৃষ্টিকর্ত্তা ছিলেন। তাঁহারা কি ব্রাহ্ম সমাজেরই পরবর্ত্তী নেতাগণ, না হিন্দু সমাজের নেতারাও সে গৌরবের অধিকারী? পৌত্তলিক কুসংস্কারপরায়ণ কোনও বাঙালী নব্যবঙ্গের নেতা নিশ্চয়ই নহেন। বিদ্যাসাগর বঙ্কিমচন্দ্র অথবা বিবেকানন্দ, রামমোহনের পর্য্যায়ে পড়েন না, তাঁহারা কেহই এই প্রথম সৃষ্টিকর্ত্তার সৃষ্টিমন্ত্র গ্রহণ করেন নাই। অতএব এখানে নব্যবঙ্গ শব্দটির কোনও বিশেষ তাৎপর্য্য আছে বলিয়াই মনে হয় এবং সে অর্থে রামমোহন নব্যবঙ্গের সৃষ্টিকর্ত্তাই বটে। তথাপি