পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
বিবিধ কথা

রামমোহন পাণ্ডিত্যের অভিমান ত্যাগ করিয়া সর্ব্বসাধারণের জন্য “জ্ঞানের অন্ন ও ভাবের সুধা পরিবেশনে করিতে উদ্যত হইলেন।” এই সর্ব্বসাধারণ কাহারা? নিশ্চয় পণ্ডিতেরা নয়। তাহা হইলে বেদান্ত ব্রহ্মসূত্র ও উপনিষৎ কি এত কাল পরে রামমোহনের সাহিত্যিক পাকপ্রণালীর গুণে এমনই সুস্বাদু ও সুপেয় হইল যে, সর্ব্বসাধারণ তাহা আকণ্ঠ পান করিতে লাগিল! রামমোহনের তপস্যার ফলে অপণ্ডিত জনসাধারণ বেদান্তবিদ্ হইয়া উঠিল? রবীন্দ্রনাথ আরও বলিয়াছেন— “খাস দরবার ও আম দরবার ব্যতীত সাহিত্যের রাজ-দরবার সরস্বতী মহারাণীর সমস্ত প্রজাসাধারণের উপযোগী হয় না। রামমোহন রায় আসিয়া সেই আম দরবারের সিংহদ্বার স্বহস্তে উদ্ঘাটিত করিয়া দিলেন।” দুঃখের বিষয়, প্রজাসাধারণের তো কথাই নাই—বাংলা সাহিত্যের জমিদারগণও কোনও পুরুষে সেই সিংহদ্বারের দিকে পদচালনা করেন নাই, এবং না করিয়া বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হন নাই। তথাপি রবীন্দ্রনাথ বলেন—“এইরূপে বাংলা দেশে এক নূতন রাজার রাজত্ব, এক নূতন যুগের অভ্যুদয় হইল”—and Rabindranath is an honourable man।

 রামমোহন সম্বন্ধে প্রধান জনশ্রুতিগুলি আমি এক একে পাঠকগণের সম্মুখে উপস্থিত করিলাম— তাহার কতটুকু সত্য তাহাও নির্ণয় করিবার চেষ্টা করিয়াছি। এ সকল হইতে রামমোহনের যে কৃতিত্ব উপলব্ধি করা যায় তাহা সংক্ষেপে এই যে, তিনি যে ক্ষেত্রে যেটুকু কাজই করিয়া থাকুন, পাশ্চাত্য যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক মনোভাবে বাঙালীর মধ্যে তিনিই প্রথম অনুপ্রাণিত হইয়াছিলেন। ইহাই তাঁহার মনীষার একমাত্র গৌরব। রামমোহন সে যুগের বিশিষ্ট বাঙালীগণের অন্যতম। কিন্তু