পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রামমোহন রায়
৭৯

হইলে, যে কল্পনা-শক্তির প্রয়োজন তাঁহার তাহা ছিল না। তত্ত্বকে নিজ জীবনে তিনি যে ভাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহাতেও, তাঁহার যে লোকগুরু হইবার কামনা ছিল, এমন মনে হয় না। বৃথাই আমরা তাঁহাকে লইয়া টানাটানি করিতেছি।

 রামমোহনের মৃত্যুর পর আজ এক শত বৎসর অতীত হইয়াছে। এই কালের মধ্যে আমাদের জাতীয় জীবন নানা অবস্থার বশে, ও নানা ব্যক্তির সাধনার ফলে, একটা বিশেষ স্থানে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। গত ত্রিশ বৎসর ধরিয়া সমাজে রাষ্ট্রে ও নৈতিক জীবনে একটা অস্থিরতা প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। কোনও একটা সুনির্দ্দিষ্ট আদর্শে আমরা এখনও পৌঁছিতে পারি নাই। হয়তো অদূরভবিষ্যতে আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট যে ভাবে নিবারণ হইবে, তাহা হইতেই একটা আদর্শ স্থির হইয়া যাইবে, সমাজ-জীবন সেই ভাবেই পুনর্গঠিত হইবে। তথাপি সে আদর্শ যে জাতীয়তার উপরেই প্রতিষ্ঠিত হইবে, এ অনুমান আজিকার দিনেও অসঙ্গত নয়। সমাজ যেমন আকারই ধারণ করুক, রঘুনন্দনের অষ্টবিংশতি তত্ত্ব যে ভাবেই পরিবর্ত্তিত হউক—জাতিকে তাহার স্বধর্ম্মের উপরেই আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। এজন্য, কোনও বিশেষ ব্যক্তি-মন নয়—সমাজ-মন জাগ্রত হওয়া চাই; ব্যক্তিগত বিবেকবুদ্ধি অথবা সার্ব্বভৌমিক যুক্তিবাদও নয়— জাতির বিশিষ্ট ভাবপ্রকৃতিকে এ যুগের উপযোগী করিয়া উদ্বোধন করিতে হইবে। গত এক শত বৎসর ধরিয়া এ জাতির প্রজ্ঞা ও প্রতিভা সেই প্রয়োজনসাধনের প্রাণপণ প্রয়াস করিয়াছে; এ পর্য্যন্ত একের পর অন্যে যাঁহারা নেতৃত্ব করিয়াছেন ও করিতেছেন, তাঁহাদের যিনি সেই গূঢ় চৈতন্যের মধ্যে যেটুকু প্রবেশ করিতে