পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
বিবিধ কথা

অধ্যয়ন করিলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, রামমোহন ধর্ম্মের জন্যই কোনও ধর্ম্মবিধির পক্ষপাতী ছিলেন না—প্রত্যক্ষ প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধন করিয়া জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করাই তাঁহার আদর্শ ছিল। সকল হৃদয়বৃত্তিই কুসংস্কারমূলক—পৌত্তলিকতা এই হৃদয়-দৌর্ব্বল্য ও বুদ্ধিমান্দ্যের আকর; সেই নীতিই উৎকৃষ্ট নীতি, যাহা মানুষকে আত্মপ্রতিষ্ঠার অবাধ স্বাধীনতা দেয়, সর্ব্বপ্রকার সামাজিক বন্ধন ও আধ্যাত্মিক আত্মনিগ্রহ হইতে মুক্তি দেয়; সমাজ বা ধর্ম্মের গণ্ডি হইতে বহির্গত হইয়া সার্ব্বভৌমিকতার ক্ষেত্রে দাঁড়াইতে পারিলেই মানুষের মনে আর কোনও বাধা থাকে না—একটা অতি উদার যুক্তিবাদের আশ্বাসে, দেশ সমাজ ও স্বজনের প্রতি ক্ষুদ্র কর্ত্তব্যের কণ্টক-পীড়ন হইতে সে অব্যাহতি লাভ করে, আপনার জীবন আপনার মনের মত করিয়া গড়িয়া লইবার অবকাশ পায়। রামমোহন তাঁহার জীবনে অতি অল্প বয়স হইতেই এই ব্যক্তি-ধর্ম্মের প্রেরণা লাভ করিয়াছিলেন; প্রথমে নিজের পরিবারের সঙ্গে এবং পরে স্বজাতীয় সমাজের সঙ্গে তাঁহার ব্যবহার হইতে তাহার এই আদর্শ আরও স্পষ্ট হইয়া উঠে। রামমোহন জীবনে কখনও কোনও ত্যাগ স্বীকার করেন নাই—ধর্ম্ম, দেশ বা সমাজের জন্য তিনি যতই চিন্তা করিয়া থাকুন, তজ্জন্য কোনও দিকে তাঁহাকে কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হয় নাই। তিনি বুদ্ধিমানের মত অর্থোপার্জ্জন করিয়াছিলেন, পান-ভোজন ও বিলাস-ব্যসনে তাঁহাকে কখনও অভাব ভোগ করিতে হয় নাই। এই যে রামমোহন—এই ব্যক্তি-স্বাধীনতাকামী, সর্ব্বসংস্কারমুক্ত, সর্ব্বসংস্কারমুক্ত, শত্রুঞ্জয়, ভোগী, মেধাবী, আত্মোন্নতিসাধনে সিদ্ধপুরুষ—ইনি বিস্ময় উৎপাদন করিবার মত চরিত্র বটে। কিন্তু এ আদর্শ খুব বড় আদর্শ নয়। এইরূপ নীতিমার্গে বিচরণ