পাতা:বিবিধ কথা.djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রামমোহন রায়
৮৩

করিলে বুদ্ধিমানের বলবৃদ্ধি হইতে পারে, যে শক্তিমান তাহার জীবন জয়যুক্ত হইতে পারে; কিন্তু যেখানে দুর্ব্বলের হৃদয়কে উদ্বুদ্ধ করিয়া আত্মিক স্বাস্থ্যলাভের উপায় করা প্রয়োজন, সেখানে এ আদর্শ অনুকরণযোগ্য নয়। কেহ কেহ রামমোহনকে একরূপ আধুনিকতা-ধর্ম্মের প্রচারক বলিয়া থাকেন—এক অর্থে ইহা সত্য। যে ব্যক্তি-ধর্ম্মের প্রাবল্য, যুক্তিবাদমূলক স্বার্থ-নীতি—এবং তাহারই সঙ্গে বিশ্বপ্রেমের উদারতা, আজকাল এক সম্প্রদায়ের শিক্ষিত বাঙালী সমাজে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছে—রামমোহনের ভক্ত শিষ্য মহাকবি রবীন্দ্রনাথ যে ধর্ম্মকে সর্ব্বোৎকৃষ্ট বলিয়া প্রচার করিতেছেন—তাহাই যদি এ জাতির সর্ব্বশেষ ও সর্ব্বোত্তম ধর্ম্ম হয়, তবে রামমোহনই সেই আধুনিকতার গুরু। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এখনও তাহা সর্ব্ববাদিসম্মত হয় নাই—এ জাতি এখনও যে পথে চলিতেছে, সে পথের অগ্রণীগণ যে আদর্শে অনুপ্রাণিত, তাহা রবীন্দ্রনাথের আদর্শ নহে; রবীন্দ্রনাথও তাহা হইতে দূরে অবস্থান করিতেছেন। তাই মনে হয়, রামমোহনের দিন যেমন পূর্ব্বে কখনও আসে নাই, তেমনই আজিও তাহা অনাগত; ভারতের মহাজাতি এখনও রামমোহনের আদর্শ-অনুযায়ী আধুনিক হইতে পারে নাই; যদি কখনও পারে, তবে সেই দিন রামমোহন আধুনিক ভারতের জন্মদাতা বলিয়া পূজা পাইবেন; কিন্তু সে এখনও নহে।

মাঘ, ১৩৪০