আচার্য্য কেশবচন্দ্র ও বাংলার নবযুগ
আচার্য্য কেশবচন্দ্রের বাৎসরিক স্মৃতি-সভায় আপনারা আমাকে কিছু বলিবার জন্য আহ্বান করিয়াছেন, ইহাতে আমি যেমন এক দিকে আমার প্রতি আপনাদের এই অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ, তেমনই আর এক দিকে বড়ই সঙ্কোচ বোধ করিতেছি। কারণ কেশবচন্দ্রের মত একজন ধর্ম্মবীর মহাপুরুষের সম্বন্ধে আমার মত সাধনাহীন ব্যক্তির বলিবার কি-ই বা থাকিতে পারে? ধর্ম্ম-সাধন বা ধর্ম্ম-তত্ত্বের অনুশীলন আমি কখনও করি নাই। কেশব যে সাধনমন্ত্র প্রচার করিয়াছিলেন, সেই ভক্তির উৎসাহকে অগ্নিহোত্রীর মত যাঁহারা রক্ষা করিয়া আসিতেছেন—যাঁহারা কেবলমাত্র মত বা তত্ত্ব নহে, কেশবের জীবন-বেদের সেই অপৌরুষেয় আর্ষ দীপ্তিকে নিজ-জীবনে সঞ্চারিত করিয়াছেন, তাঁহাদের নিকট আমিই শিক্ষার্থী: কেশবের সেই নিগূঢ় ধর্ম্ম-তত্ত্বের সম্বন্ধে আমার বলিবার কিছুই নাই।
কিন্তু ধর্ম্মপ্রচারক কেশবচন্দ্রের জীবন আর এক দিক দিয়া আলোচনা করিবার যোগ্য। এই জাতির গত-যুগের ইতিহাসে যে সমস্যা ও সঙ্কট ক্রমশ ঘনাইয়া উঠিয়াছিল,—কেশবচন্দ্র তাহারই একটি স্ফুলিঙ্গ। জাতির সেই ইতিহাস বুঝিতে হইলে, কেশবচন্দ্রকেও বুঝিতে হইবে, স্মরণ করিতে হইবে। আমাদের দেশে, আমাদের জাতীয় প্রকৃতির নিয়মে, সকল সমস্যার মূলে একটা আধ্যাত্মিক সঙ্কট-রূপেই দেখা দেয়, কেশবের মধ্যে ইহা বিশেষ করিয়া সেই আকারই ধারণ করিয়াছিল। যুগ ও জাতির প্রতিনিধিরূপে কেশব-জীবনের আদর্শ ও তাঁহার কর্ম্মপ্রচেষ্টা আমি যেরূপ বুঝিয়াছি, তাহাই আজ আপনাদের নিকট নিবেদন করিব।