8 বিবিধ প্রবন্ধ । মানব জাতির সহিত দেবতার সম্পর্ক । সত্যযুগ সম্বন্ধে অনেক অত্যাশ্চৰ্য্য কথা প্রথিত আছে। তন্মধ্যে তাৎকালিক নরজাতীয়দিগের সহিত দেৰতাদিগের সংস্রব বিষয়ে অতীব চমৎকারজনক বিবরণ সমস্ত প্রাপ্ত হওয়া যায়। যেমন লোকে শিশুদিগকেই বিশিষ্ট্ররূপে দেবাধিষ্ঠিত জ্ঞান করে, বোধ হয় সেইরূপ পৃথিবীর আদিম অবস্থাকেও দেবাবিভূতি বলিয়া জন সমূহের প্রতীতি হইয়াছিল । মনুষ্যস্থষ্টির সৰ্ব্ববাদিসম্মত কোন বিবরণই যে স্বতঃ প্রাপ্ত হওয়া যায় না, একথা বলা বাহুল্য মাত্র। পরস্তু মানবকুল যে প্রকারে স্বল্প হউক, তাহারা প্রথমে কিরূপ অবস্থায় অবস্থিত ছিল, কিরূপে আপনাদিগের জীবিকা নিৰ্ব্বাহ করিত, কেমন করিয়াই বা প্রথমে পরস্পর বাক্যালাপ করিতে শিখিল, আর এখন মনুষ্যগণ যে বিবিধ বিদ্যায় নৈপুণ্যলাভ করিয়াছে, সেই সকল বিদ্যার আরম্ভই ব; কি প্রকারে হইয়াছিল, ইত্যাদি সমস্ত বিবরণ জানিবার নিমিও অত্যন্ত কৌতুহল হয়। ঐ কৌতুহল পরিপূরণার্থ যথার্থ ইতিবৃত্তের অভাববশতঃ যে বিবিধ উপায় পরিকল্পিত হইয়াছে তাহ যে সৰ্ব্বস্থলে সকলের মনঃপূত হয় না, ইহা বলা বাহুল্য। ভাষা, লিপি, শিল্প ও চিকিৎসা প্রভৃতি নানাবিদ্যার স্বষ্টি—এই সমুদয় কি কেবল মনুষ্যের অভিজ্ঞতামূলক, না প্রথমতঃ ইহাদিগের উপদেষ্ট কেহ ছিল, সকলের মনেই এই সকল প্রশ্ন উদিত হইয়া থাকে, কিন্তু বোধ হয়, কেহই ইহুদিগের নিশ্চয়রূপ মীমাংসা করিতে সমর্থ হয়েন না। পূৰ্ব্বতনকালের সব্বদেশীয় জনগণের এই সিদ্ধান্ত স্থির ছিল যে, নরজাতির আদিম অবস্থায় স্বষ্টিকৰ্ত্ত স্বয়ং, অথবা তাহার অনুগৃহীত ব্যক্তির মনুষ্যদিগকে তাহাদিগের নিতান্ত প্রয়োজনীয় বিষয় সমস্ত শিখাইয়া দিতেন । এই হেতু সৰ্ব্বপ্রকার বিদ্যাই জগদীশ্বর প্রদত্ত অথবা দেববিশেষ দ্বারা প্রকাশিত বলিয়া শাস্ত্রে বর্ণিত হইয়াছে। আমাদিগের পুরাণে প্রায় সকল বিদ্যাই মহাদেবের প্রকটিত বলিয়া প্রথিত আছে । “মিশর” দেশীয়রা “আইরিস” “আইসিস” ও “হৰ্ম্মিস্” এই দেবত্রয়কে মনুষ্য জাতির আদিম উপদেষ্ট বলিয়া বর্ণন করিয়াছেন। প্রাচীন আসিরীয় লোকেরা আপনার দিগের “বিলস” দেবকে সকল বিদ্যার স্রষ্ট বলিয়া গিয়াছেন । গ্রীকেরা মিসর দেশ হইতেই আপনাদিগের ধৰ্ম্মশাস্ত্র সমুদায় প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, অতএব তাহারাও যে মিসরীয়দিগের অনুমন্ত কথা বলিবেন, ইহা বল বাহুল্য।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।