দ্বিতীয় ভাগ । - ১১৯ করে। চাকাই মসলিন, কাশীর কিংখাপ, কাশ্মীরী শাল, গাজিপুরী আতরের সৃষ্টি এদেশীয় রাজা ও নবাবদিগের আড়ম্বরপ্রস্থত বটে, কিন্তু তাহার উৎপাদনে বহু শত বর্ষকাল ধরিয়া বহু সহস্র এদেশীয় লোক প্রতিপালিত হইয়া আসি, য়াছে। পূৰ্ব্বকালে রাজা ও জমিদারেরা যে কিরূপ সামান্ত বাটতে থাকিতেন এবং কত বড় বড় যে দীর্ঘিকা খনন করাইতেন তাহ কাহারও অবিদিত নহে । এই জন্যই ইউরোপীয়ের চক্ষে একান্ত অকৰ্ম্মণ্য সামান্ত রাজাও কার্ষ্যতঃ অনেকটা প্রজাহিতকারী এবং প্রকৃত পক্ষে প্রজার ভালবাসার পাত্র। উর্হাদের “ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে খাওয়ান” ইউরোপীয়ের একটা নিন্দার কথা স্বরূপ উল্লেখ করেন। কিন্তু উহা যে অনেকটা শিক্ষাবিভাগের বৃত্তির রূপান্তর মাত্র তাহা বুঝেন না । আজকাল দেশীয় রাজার দীর্বিক খনন, তুলাদান, দেশীয় শিল্পজাতের ব্যবহার, সকলই কম করিয়া বিলাতী শিল্প, বিলাতী খান দেওয়া এবং বিলাতী কৰ্ম্মচারীতেই অনেক টাকা ব্যয় করিতেছেন এবং সেই জন্ত র্তাহারা পাশ্চাত্য ধরণে “সিভিল লিষ্ট, বজেট এবং ডিপার্টমেণ্ট” প্রভৃতির স্বষ্টি করিয়াও পূর্বের স্থায় প্রজারঞ্জনে সমর্থ হইতেছেন না। প্রজারা রাজাকে যে পরিমাণ টাকা দিয়া দেশীয় কৰ্ম্মচারীর বেতনে, শিল্পের মূল্যে ও দানে তাহার যে পরিমাণ ফিরিয়া পাইত, এখন তদপেক্ষ অধিক টাকা দিতে হইতেছে—অথচ ফিরিয়া অনেক কম পাইতেছে। কতক ইংরাজীশিক্ষণ প্রবেশ করায় দেশীয় রাজ্যেও প্রধান প্রকৃতিবর্গ ঐ সকলের খোজ লইতে আরম্ভ করিতেছে । রাজার কার্য্যের প্রতি এখন তীক্ষ দৃষ্টি রাখিতে অভ্যাস হওয়ায় এখনকার ইংরাজী শিক্ষিতের আর “দেশীয় বেবন্দোবস্তী নিয়ম খারাপ ছিল এখনকার বন্দোবস্তে সবই ভাল হইয়াছে’ এই কথা শুনিয়াই তৃপ্তিলাভ করেন ন— তাহারা আর মোটা কথায় ভোলেন না। ঠিক ইউরোপীয় রাজনীতিজ্ঞদিগের স্বরে জিজ্ঞাসা করেন-"মোটের উপর দেশীয় প্রজার এসব বন্দোবস্তে রাজস্বের টাকা বেশী ফেরৎ পাইয়াছে কি না ?” তাহ না পাইলেই ত ইউরোপীয় মতে রাজকাৰ্য্যের বন্দোবস্তে মৌলিক দোষ পড়িল । ইংরাজী শিক্ষার প্রভাবে দেশীয়দিগের রাজভক্তির এইরূপ ভাব পরিবর্তন তাহাদের মানসিক স্বাস্থ্যোন্নতির অমুকুল নহে । এই জন্তই আমাদের বর্তমান অবস্থায় “ভোট” দ্বারা প্রতিনিধি নিৰ্ব্বাচন প্রভৃতির হাঙ্গামা তেমন উপকারী বলিয়া বোধ হয় না। প্রদেশে রাজা ধৰ্ম্মপ্রণোদিত হইয়া ধাৰ্ম্মিক
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১২৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।