*>.२२ বিবিধ প্রবন্ধ । সমুদয় রত্ন পাইলেও সে তুষ্ট হইত না । সম্প্রতি ত তাহার কোন চিত্ত্বই দেখিতে পাওয়া যায় না ! সচরাচর মনুষ্যেরা বিদ্যা সন্ত্রম শক্তি এবং ধন এই চারিটি পাইবার নিমিত্ত আকাঙ্ক্ষা করে । কিন্তু আমাদের দেশের লোকেরা এক্ষণে“এণ্টেন্স” পৰ্য্যন্ত বিদ্যা করিয়া তুলিতে পারিলেই অধিকাংশ সন্তুষ্ট হয়েন। যিনি এল-এ পর্য্যন্ত উঠিলেন, তিনি ত মহামহোপাধ্যায় হইলেন। যিনি বি-এ তিনি অতীতাধ্যাপক, আর যিনি এম-এ র্তাহার কথাই নাই—র্তাহার বিদ্য৷ উপচিয়া পড়িতে থাকিল—শরীর মধ্যে আর উহার স্থান হয় না—র্তাহার চলিতে বা কথা কহিতে গেলেই বিদ্যাবত্তার চিকু সমস্ত যেখানে সেখানে ছড়াইয়া পড়িতে থাকে । কিন্তু ইউরোপে ত এরূপ হয় না। সেখানকার বি-এ বা এম-এ রাই সৰ্ব্বাপেক্ষ বড়লোক নহেন, যাহার কোন তথ্য উদ্ভূত বা আবিষ্কৃত করিতে না পারেন র্তাহারা আপনাদিগকে সামান্ত লোকের মধ্যেই জ্ঞান করিয়া থাকেন। আমাদের এখানেত কেহই কোন নূতন ব্যাপার বাহির করিবার নিমিত্ত এ পর্য্যন্ত সচেষ্ট হইলেন না। বিদ্যালয়ের নিয়োজিত কয়েকখানি পুস্তক কণ্ঠস্থ করিয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইতে পারিলেই কৃতাৰ্থ হইলেন। আমাদিগের বোধ হয় যদি দুই একজন বাঙ্গালী কিছু নুতন কাজ করিয়া তুলিতে । পারিতেন তাহা হইলেই বাঙ্গালা দেশের নাম উজ্জল হইয়া উঠিত এবং বাঙ্গালী জাতিটর মাহাত্ম্য বৃদ্ধি হইয়া এদেশের শাসন প্রণালীও এক্ষণকার অপেক্ষা ও অনেকাংশে ঔৎকর্ষ লাভ করিত ৷ বিদ্যা বিষয়ের আকাঙ্ক্ষী ত এইরূপ । সন্ত্রমের আকাঙ্ক্ষা ইহ। অপেক্ষা বড় অধিক প্রবল বলিয়া বোধ হয় না। শান্তি ও সুখ । শান্তি ও সুখ দুইটী শব্দ লোকের মুখে শুনিতে যত পরস্পর নিকটবর্তীভাবব্যঞ্জক প্রকৃত পক্ষে উহার তেমন নিকটসম্বন্ধবিশিষ্ট নয়। নিকট কি ? প্রত্যুত ঐ দুইটার মধ্যে অনেকটা বৈপরীত্য সম্বন্ধই দেখা যায়। শান্তি ধৈৰ্য্যগুণকে অবলম্বন করে, স্থৈৰ্য্যকে সমানয়ন করে, আত্মপরে সম্মিলন করে ; বিষয়ানুরাগ হ্রাস করে, নম্রতা, দয়া, ক্ষম, তুষ্টি প্রভৃতি কোমল মনোভাবের পোষণ করে । মুখ কাৰ্য্যপরতাকে অবলম্বন করায় দুরাকাঙ্ক্ষার সমানয়ন করে, আত্মপরভেদ বৃদ্ধি করিয়া দেয়, বিষয়ানুরাগ জালাইয়া তুলে, ধৃষ্টত। কাঠিন্ত লালসা এবং অসন্তোষ প্রভৃতি মনোভাবকে বৰ্দ্ধিত করিয়া তুলে ।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।