দ্বিতীয় ভাগ । ১২৩ শাস্তি এবং মুখে অনেক প্রভেদ। শান্তি সামঞ্জস্ত বিধানের চেষ্টা করে, মুখ বিষমত; আনিয়া দেয় । ঐ যে কথাগুলি বলা হইল তাহার উপর একটী বিচার চালান যায় । বস্তুতঃ আজি কালি ইংরেজদিগের হিতবাদ এবং জৰ্ম্মণদিগের অনুশীলনবাদ শিখিয়া ইংরাজীশিক্ষিত নব্যদল বুঝিয়াছেন যে, সুখই জীবনের উদ্দেশু । স্বতরাং শান্তিতে এবং সুখেতে আমি যে প্রভেদ আছে বলিলাম তৎসম্বন্ধে তাহারা বলিতে পারেন—শাস্তিই কিসের জন্য ? উহাও ত সুখের জন্ত । আমি বলি তাহ নয়-শাস্তি শাস্তিরই জন্য। যে সমাজে ধৰ্ম্ম শিক্ষাদি গুণে লোকের মন শান্তির দিকে যায়, সে সমাজে লোকের প্রকৃতি কিরূপ হয়, আর যে দেশে মানুষের মন সুখানুসন্ধানেই রত তথায় মনের ভাব কিরূপ হইয়া থাকে, আমি ইহাই বলিয়ছি। তবে ইহাও বলিয়া রাখি ষে, র্যাহারা বলেন মানুষ সুখের জন্যই সকল কাজ করে তাহাদিগকে অনেক স্থলে অনেক প্রকার কষ্ট কল্পনা করিতে হয় সাক্ষাৎ মুখামুসন্ধান সকল কার্য্যের মূল নহে। ঐ যে সেদিন মান্দ্রাজের অগ্নিকাণ্ডে একটা সুশিক্ষাসম্পন্ন যুবাপুরুষ চারিট লোকের প্রাণ বাচাইয়া পঞ্চমটাকে বাচাইতে গিয়া স্বয়ং মারা পড়িল সে কি আত্মমুখের জন্যই ওরূপ করিয়াছিল ? যদি এমন সকল স্থলে সুখানুসন্ধানের আরোপ করা যায়, তাহাতে প্রকৃত তথ্যের নির্বাচন কিছুই হয় না। মুখ শব্দের লক্ষণ মাত্র পরিবৰ্ত্তিত করা হয়, অর্থাৎ এই বলা হয় যে, যে জন্ত যাহা কিছু করা হউক সে সকল উদ্দেশ্র্যেরই নাম সুখ । ইহাকে আত্মাশ্রয় দোষ বলে । বস্তুতঃ মানুষই বল, আর অপর প্রাণীই বল, আর উদ্ভিদই বল, আর যাহা কিছু বল, সকলই শক্তির আধার অথবা শক্তিময় অথবা শক্তিস্বরূপ বলিতে পার। একট পরমাণু যে আর একটা পরমাণুকে আকর্ষণ করে তাহার কারণ কি ? অগ্নি যে স্থানে থাকে তাহার চতুদিকে উত্তাপ বিতরণ করে কেন ? উদ্ভিদ যে দিকে আলোক পায় ফিরিয়া ঘুরিয়া সেই দিকেই বাড়িয়া যায় কি জন্ত ? সন্তোজা ত বানরশিশু যে মাতৃগর্ভ হইতে অৰ্দ্ধনিঃস্থত হইয়া বৃক্ষশাখা ধরিতে পারে তাহার হেতু কি ? নরশিশু জাতমাত্র মাতার স্তনে মুখ দেওয়াইলেই তাহা টানে কেন ?—পরদুঃখ দেখিলেই ধৰ্ম্মশীল মজুন্যের মনে দয়ার উদ্রেক হইয়া সেই দুঃখ নিবারণের চেষ্টা হয় কেন ? –এই সকল প্রশ্নের একমাত্র উত্তর—উছাদিগের স্বভাবসিদ্ধ অথবা সংস্কারজাত কিম্বা শিক্ষালব্ধ গুণ। যদি তাহারও কারণ জিজ্ঞাস্ত হয় তবে
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।