s8० বিবিধ প্রবন্ধ । অস্তুৰ্ব্বিচ্ছেদে ও ভ্রষ্টাচারে তেজ হ্রাস হইল। মুসলমান আসিল, সকল আগুনই একেবারে নিবিল স্বাধীনতা গেল, সাম্প্রদায়িক মতভেদের বিচার থামিল । আবার সম্মিলনের চেষ্টা । সেই চেষ্টার ফল তন্ত্রশাস্ত্রের পুনৰ্ব্বার চর্চা । তন্ত্রশাস্থে ভেদজ্ঞানের বড়ই নিন্দ । কালী কৃষ্ণে, তার রামে, বিষ্ণু শিবে ভেদ জ্ঞান করিলেই নিশ্চয় অধোগতি । রূপভেদ, নামভেদ, মন্ত্রভেদ কিছুই নয়—ওগুলি কেবল উপাসকেরই সুবিধার নিমিত্ত । চিন্ময়সাদ্বিতীয়স্য নিষ্কলস্যাশরীরিণঃ । উপাসকানাং সিদ্ধার্থং ব্রহ্মণেরূপকল্পনা ॥ তন্ত্রশাস্ত্র সমাজের পরাধীনতার সময়ে সমুৎপন্ন। পরাধীনতা দেশবাসী দিগের তেজস্বিত থাকিতে সংঘটিত হয় না। অতএব তান্ত্রিক দীক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য লোক সকলকে তেজস্বী করা। পরাধীন জাতির মুখ ফুটিয়া মনের কথা বলিবার যে থাকে না । মুখ ফুটিয়া বলিতে চাও বিজেতাদিগের মনের মত যাহা হয় বল তাহাদিগের মনের মত যাহা না বলিবে তাহাতেই তাহার রুষ্ট হইবেন । তন্ত্রশাস্ত্র বাহিরের চেচাচেচির মধ্যে না গিয়া, মনঃস্থির করিতে, গোপন সাধন করিতে শিক্ষা দেয় - হাটের মাঝে ব্রহ্মজ্ঞান বাহির করে না । তন্ত্রশাস্ত্র এক প্রকার ফ্রিমেশনরি। বড় বড় অনেক সাহেব ফ্রিমেশন আছেন। তাহারা কি মন্দ লোক ? কোন সময়ে ফ্রিমেশনরি দ্বারা পৃথিবীর কি অনেক উপকার হয় নাই ? এখনও যে কি হইতেছে কি না হইতেছে কে বলিতে পারে? অতএব তন্ত্রশাস্ত্রের প্রতি ব্যর্থ কটুক্তি করিও না। তন্ত্রশাস্ত্র বই আর কোন শাস্ত্র শবসাধন শিখাইতে পারে না, মরাকে বাচাইতে পারে না । বঙ্গ সমাজের বিবরণ । বৌদ্ধধৰ্ম্ম বিহার প্রদেশেই অতি প্রবল হইয়াছিল। বিহার বাঙ্গালার সন্নিহিত দেশ। অতএব বাঙ্গালাতেও বৌদ্ধধৰ্ম্মের বিশেষ প্রাদুর্ভাব হইয়াছিল সন্দেহ নাই । বৌদ্ধের প্রাদুর্ভাবে বেদ-বিদ্যার লোপ হইয়া যায়। কথিত আছে, গৌড় রাজ আদিশূর কান্তকুজ হইতে “বেদবিদ্যাপারগ ব্রাহ্মণ” আনয়ন করিয়া তাহাদিগকে বঙ্গদেশে স্থাপিত করেন। --- আমি কান্তকুজ নগরেও এই বঙ্গকিম্বদন্তীর অনুরূপ কথা শুনিয়াছি এবং * বীরভূঞদের সময়ে কিয়ৎপরিমাণে তান্ত্রিক বীরাচারী প্রকৃত বীরপুরুষদিগের আবির্ভাব বাঙ্গালীর মধ্যেই হইয়াছিল। তান্ত্রিক শিক্ষায় তখন এই বাঙ্গালীকে কি করিয়াই তুলিয়াছিল ।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।