পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y& e বিবিধ প্রবন্ধ । দেখাইয়া দেন, কিন্তু জাতিগত উৎকর্ষলাভের কোন পথ নির্দেশ করেন না । তান্ত্রিক সাধক ৰীরপুরুষ বুদ্ধিমান পুরুষ এবং ধৰ্ম্মশীল পুরুষ হইতে পারেন । প্রকৃতরূপে তান্ত্রিক সাধন করিলে মনুষ্যকে অবশুই তাদৃশ পুরুষ হইতে হইবে । কিন্তু সমাজের উন্নতির পক্ষে তন্ত্রশস্ত্র হইতে কোন পাকা উপদেশ পাওয়া যায় বলিয়া বোধ হয় না । তন্ত্র মৌনী হইতে, চিন্তাশীল হইতে, মন্ত্রগুপ্তি করিতে, ইন্দ্রিয় সংযম করিতে শিখাইবেন, কিন্তু বাগ্মী হইতে, অন্তকে আপনার পক্ষে আনিতে, নিজ মন্ত্রে অন্তকে দীক্ষিত করিতে, দলবন্ধন করিতে শিখাইবেন না । তন্ত্র সমাজবন্ধন শিথিল করিতে পরিবেন, খাদ্যt. খাদ্য বিচারে খুটিনাটার বাড়াবাড়ির বাহির করিতে পারিবেন, ধৰ্ম্মের অনুষ্ঠানভাগের প্রকৃত উদ্বেগু বুঝাইতে পরিবেন, অভেদ জ্ঞান বিস্তৃত এবং বদ্ধমূল করিয়া প্রণয়স্রোত বৰ্দ্ধমান করিতে পরিবেন, কিন্তু জাতীয় ভাব জন্মাইতে পারিবেন ন৷ ” কিন্তু তন্ত্রশাস্ত্র যে অপর সকল শাস্ত্র অপেক্ষা অধুনাতন তাহা সৰ্ব্ববাদি সম্মত । তন্ত্রশাস্ত্র যে বৌদ্ধবাদ প্রবর্তনের অনেক পরবর্তী তাহাও নিঃসন্দেহ । তন্ত্রশাস্ত্র যে ভারতবর্ষে মুসলমান সমাজের পরে প্রবল হইয়াছে তাহাও অমুমান করা যাইতে পারে। এমত অবস্থায় সমুদ্ভূত হইয়াও তন্ত্রশস্ত্রে জাতীয় ভাবের সুস্পষ্ট সমুদ্রেক দৃষ্ট হয় না কেন ? ও ভাবটী ত ভারতবর্ষ দেশের অনুপযোগী ভাব নয় —ঐ ভাবের যে চিহ্ন সকল আজি কালি দেখা দিতেছে সেগুলি-ত শুদ্ধ বিদেশীয় ভাবের অনুকৃত মাত্র নয় ! সুতরাং সাক্ষাংসম্বন্ধে তন্ত্রে জাতীয় ভাব উত্তেজনার তেমন কোন চিহ্ন না থাকিলেও উহার অনুযায়ী শিক্ষা অনেকাংশে বর্তমান অবস্থায় অবশুই উপযোগী হইবে সন্দেহ নাই। অতএব জাতীয় ভাব বৃদ্ধির নিমিত্ত সাক্ষাৎ কোন চেষ্টা না করিয়া তন্ত্রের প্রদর্শিত পথে বিনা আস্ফালনে এবং বিন! আড়ম্বরে অল্পে অল্পে পাদ সঞ্চারণ করিয়া দেখিলে হয় যে ফল কি হয় । শরীর শক্ত এবং দৃঢ় কর, বুদ্ধি প্রকৃত বিষয়ের অনুসন্ধান করুক, ধৰ্ম্ম প্রবৃত্তি বলবান হইয়া উঠুক। ঢাক বাজান ছাড়, মৌনাবলম্বন শিক্ষা কর, আর তন্ত্রশস্ত্রের সৰ্ব্বপ্রধান আদেশ প্রতিপালনপুৰ্ব্বক “গুরু” স্বীকার করিয়া গুরুকে সাক্ষাৎ ঈশ্বর বোধে ভক্তি করিতে এবং তাহার আজ্ঞা পালন করিতে আরম্ভ কর । কিছুতেই "গুরু” ত্যাগী না হইয়া দেখ—কি হয়।