তৃতীয় অধ্যায়। তস্ত্রের কথা । ( > ) গুরু । তন্ত্রশাস্ত্রে "গুরু" শব্দের বুৎপত্তি দেওয়া হইয়াছে। “গ” অক্ষর “সৰ্ব্বসিদ্ধি,” “র” অক্ষর “পাপধ্বংস” এবং “উ” অক্ষর “শিব” বুঝায়। অতএব “গুরু” শব্দের তাৎপৰ্য্য সিদ্ধিদাতা এবং পাপধ্বংসকারী শিব। তন্ত্রের মতে শিবই প্রকৃত গুরু। শিবের অধিষ্ঠান সৰ্ব্বত্র। তিনি জগদ্ব্যাপক ও জগন্ময়। পক্ষান্তরে এই নরদেহটাও সমুদয় জগন্মণ্ডলের প্রতিরূপস্বরূপ । সুতরাং নরদেহেও সৰ্ব্বময় শিবের অধিষ্ঠান। তন্ত্রশস্ত্রে এই দেহের একটা স্থল শিবের বিশেষরূপে অধিষ্ঠানভূত বলিয়। চিন্তা করিবার আদেশ আছে। স্থানটি দ্বিদল অক্ষিদ্বয়সস্তুত একটি কল্পিত পদ্ম, অর্থাৎ মস্তিষ্কের পুরোভাগ। বিশিষ্ট চিন্তায় নিমগ্ন হইলে ঐ স্থলেরই স্বায়ুমণ্ডল সমধিক পরিচালিত হয় । চিন্তাকারীর সেই ভাগের পেশীগুলিও যে সঙ্কুচিত হইয়া যায় তাহা সকলেষ্ট দেখিতে পায়। তাদৃশ চিন্ত৷ করিতে থাকিলে শিরোদেশের ঐ ভাগের ক্লাস্তির অনুভব হয়। অতএব ঐটা যে বুদ্ধিবৃত্তির অধিষ্ঠানস্থল তাহ ভূয়োদর্শন ও অভিনিবেশ দ্বার সহজেই সকলের অনুভূত হইয়া থাকে । নব্য ইউরোপীয় পণ্ডিতেরাও ব্যবচ্ছেদবিদ্যার প্রয়োগ এবং পরীক্ষাবিধান দ্বারা নিশ্চয় করিয়াছেন যে, মস্তিষ্কের পুরোভাগের দ্বারাই বুদ্ধিবৃত্তির কার্য্য সমুদয় সাক্ষাৎক্লপে সম্পন্ন হয়। অতএব প্রাচীন আর্য্যপণ্ডিতেরা তাহাদিগের বর্ণনা প্রণালীর অনুসারে মস্তিষ্কের যে অংশটকে শিবের অধিষ্ঠিত বলিয়াছেন, তাহাই যে নব্যবিজ্ঞান অনুসারে বুদ্ধিবৃত্তির কার্য্যস্থল এরূপ অনুমান করা অসঙ্গত নহে। অতএব পরমগুরু শিবের যে প্রকার অধিষ্ঠানস্থল নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহার প্রকৃতি বিবেচনা করিয়৷ এই সিদ্ধান্ত হয় যে, পরমগুরুর আশ্রয় গ্রহণ এবং স্বাবলম্বন একই কথা । গুরু সম্বন্ধীয় প্রকৃত তথ্য এই । এই তথ্য সৰ্ব্বদেশে সৰ্ব্বকালে সকলেরই
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/১৫৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।