দ্বিতীয়ভাগ । ২১ তদনুযায়ী হইয়া বিচার করাই আবগুক হয়। তাহা না করিলে বিচারকের নিন্দ হয়, এবং জনগণ অসন্তোষ প্রকাশ করে । এইরূপে ব্যবস্থা ক্রমে ক্রমে স্থির হইয়া উঠিতে থাকে। কবিগণ তৎসমুদয়কে ছন্দোবন্ধে প্রকাশ করিতে থাকেন। লোকে যত পারে স্মরণ করিয়া রাখে । পরে লিপিস্থষ্টি হইলে অগ্ৰেই ব্যবস্থা সকল লিপিবদ্ধ হয় । যে মহাত্মাকর্তৃক সৰ্ব্ব প্রথমে কোন দেশের ব্যবস্থা লিপিবদ্ধ হইয়া থাকে, তিনিই তদেশের ব্যবস্থাপক বলিয়া প্রসিদ্ধ হন । আমাদের দেশে ব্যবস্থাপকদিগকে *সংহিতাকাব? কহে । অনেক প্রাচীন জাতীয় লোকের সংহিতা প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে । দেশভেদে ও তৎকালীন ব্যক্তিদিগের অবস্থাভেদে সংহিতার প্রকৃতিও বিভিন্ন হয় । কিন্তু কোন কোন বিষয়ে সংহিতাদিগের ঐক্য আছে । সেই সকল বিষয় বিবেচনা করিয়া দেখিলেই মানবগণের কেমন অবস্থায় কিরূপ ব্যবস্থা প্রচলিত হয়, তাহার কিঞ্চিৎ কিঞ্চিং বুঝা যাইতে পারে। অতএব সংক্ষেপে তাহার উল্লেখ করা যাইতেছে । ব্যবস্থা সকল লোকোপকারী হয় বলিয়া বহু পূৰ্ব্বকাল হইতে পারম্পর্ধ্যোপদেশানুসারে ভক্তিসহকৃত প্রচলিত হইয়া আইসে । সুতরাং ঐ সকল ব্যবস্থা মঙ্গলময় ঈশ্বর প্রণীত, অথবা ঈশ্বরাষ্ট্রগুহীত কোন মহাত্মার প্রণীত বলিয়া লোকের বিশ্বাস জন্মিয়া থাকে। বিশেষতঃ আদিমাবস্থায় লৌকিক ব্যবস্থা ধৰ্ম্মব্যবস্থা হইতে অভিম্নরূপ থাকায় সকল ব্যবস্থাই ধৰ্ম্মশাস্ত্রমুলক বলিয়া সমধিক মান্ত হয়। কিন্তু মনুষ্যসমাজ ক্রমশঃ বিস্তৃত এবং নানা ব্যবসায়ীলোক সঙ্ঘটিত হইলে উহার প্রথমাবস্থার অত্যুদার ব্যবস্থাস্থত্রের প্রয়োগস্থল সম্বৰ্দ্ধিত হয় এবং সেই জন্য ব্যবস্থাশাস্ত্র বহুমুখ হইয়া উঠে। প্রথমতঃ ব্যবস্থাশাস্ত্র, দুই ভাথে বিভক্ত হয়। এক ভাগ ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের আচারগত, অপর ভাগ লৌকিকব্যবহার সম্পৃক্ত। সকল দেশেরই ‘স্মৃতিশাস্ত্র’ এইরূপ আচারকাগু ও ব্যবহার-কাণ্ডে বিভক্ত হইয়া আছে । - বন্তদশায় অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিরও নিতান্ত অসদ্ভাব থাকে ; এবং সেই সকল দ্রব্যাদির সংরক্ষণের নিমিত্ত জনগণকে প্রাণপণে চেষ্টা করিতে হয়। তাহাতে নিরস্তরই অপঘাত মৃত্যু ঘটিয়া থাকে। সুতরাং সেই সময়ে মনুষ্যজীবন যে কেমন অমূল্যরত্ন, তাহা স্পষ্টরূপে বোধগম্য হয় না।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/২৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।