९२ বিবিধ প্রবন্ধ । তখন মমুষ্যের ধন-বিশেষ হরণ করা এবং প্রাণনাশ করা উভয়ই সমান দোষ বলিয়া গণ্য হয়। প্রাচীন কালের ব্যবস্থামাত্রেই দেখা য়ায় যে, পরদ্রব্যবিষয়ুক অপরাধে এবং পরশরীরবিষয়ক সাহস কৰ্ম্মে প্রায় অধিক প্রভেদ নাই । উভয় প্রকার দোষেই সমান দণ্ড বিহিত আছে। বরং সাহস কৰ্ম্মের অপেক্ষ কোথা ও কোথা ও অপহরণের দণ্ড অধিক ছিল। পরস্তু যখন লোকের সভ্যfবস্থা হয়, তখন এইরূপ ব্যবস্থা সকল প্রচলিত থাকিতে পারে না । তখন দ্রব্য-বিষয়ক অপরাধের দণ্ড এক প্রকার, আর শরীর বিষয়ক অপরাধের দণ্ড অন্ত প্রকার হইয়া থাকে। এইরূপে ব্যবহারকাণ্ডও দুই ভাগে বিভক্ত • হয় । তাহার এক ভাগের নাম ‘দেওয়ানী আইন’ ও অপর ভাগের নাম ‘ফৌজদারী আইন’ । ব্যবহারকাণ্ড এইরূপে বিভক্ত হইতে আরম্ভ হইলেও ঐ দুই প্রকার আইনের দণ্ড কিছু কাল বহু স্থলে সমানই থাকে, একেবারে সমুদয় পরিবৰ্ত্তিত হইয়া যায় না । ফৌজদারী আইনের দণ্ড সমস্ত যেন বৈরসাধনের নিমিত্তই বিহিত হইয়াছে, এমত বোধ হয় । কোন অপরাধে হস্তচ্ছেদ কাহাতেও বা পদচ্ছেদ, অপর কোন প্রকার অপরাধে চক্ষুরুৎপাটন, আর কণহাতে বা অগ্নিদ্বারা দহন ইত্যাদি অতিনৃশংস দও সকল প্রচলিত হইয়। থাকে । দেওয়ানীর দণ্ডও এইরূপ অতি কঠিন হয়। যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করিয়া পরিশোধ করিতে না পারে, উত্তমর্ণ তাহার শরীর পর্য্যস্ত বিক্রয় করিয়া লইতে পারেন । বিক্রয় করা কি, কোথাও কোথাও এমন আইন প্রচলিত ছিল যে, অধমৰ্থকে একবারে হত্যা করিলেও দোষ হইত না । কিন্তু ক্রমে ক্রমে আইনের এই সকল দোষ সংশোধিত হইয়া আইসে । রাজকৰ্ম্মচারিগণ, ভূম্যধিকারিবর্গ এবং যাজকমণ্ডলীরাই প্রথমে ঐ প্রকার নৃশংস ব্যবস্থার অধীনতা পরিত্যাগ করিবার চেষ্ট পায়েন । র্তাহারা প্রথমতঃ কেবল আপনাদ্বিগকেই উক্ত আইনের বিশেয বিশেষ দণ্ড হইতে মুক্ত করেন। পরে প্রজাসাধারণের প্রতিও উহার কোন কোন নিয়ম পরিবর্তিত হইয়। যায়। অনন্তর সমাজ যত দৃঢ়বদ্ধ ও শাস্তিবহুল হইতে থাকে, ততই ব্যবস্থ৷ সকল বিশুদ্ধ হইয়া অপরাধীর প্রতি বৈরনিৰ্য্যাতক ভাব পরিত্যাগ করিতে পারে, এবং যাহাঁতে দোষী ব্যক্তির দুষ্ট স্বভাব সংশোধিত হয়, তখন কেবল । এইরূপ চেষ্টাই হইতে থাকে। অদ্যাপি কোন দেশে এইটা সম্পূর্ণরূপে হইয়। উঠে নাই । কিন্তু ইউরোপের কোন কোন দেশে প্রাণদণ্ডের বিধি একবারে
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৩০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।