দ্বিতীয় ভাগ । לפי সহিত সংগ্রাম করিয়া তাহাদিগকে পরাভূত করিবে, তাহা আশ্চৰ্য্য নহে । বোধ হয়, এই জন্তই সকলদেশেরই প্রাচীন মহাকাব্যে তাদৃশ যুদ্ধবিবরণ ধর্ণিত দেখা যায়। সেই সকল কাব্যে সহস্র অত্যুক্তি থাকা স্বীকার করিলেও ঐ বিবরণ যে একেবারে অমূলক, এমন বোধ হয় মা । তখন এক একজন মহারথ যে বহুসংখ্যক পদাতির নিপাত করিতে পারিত, এ কথা মিথ্য নহে। যে সকল দেশ বিস্তৃত সমতল ক্ষেত্রের হ্যায়, সেই সকল দেশেই রথের এবং গজের সমধিক ব্যবহার হইয়াছিল। যে সকল দেশ অপেক্ষাকৃত বন্ধুর, তথায় ভূম্যধিকারিবর্গ অশ্বশিক্ষায় নিপুণ হইয়াছিলেন। আসিয়া খণ্ডের প্রাচীন দেশ মাত্রেই যুদ্ধের প্রথা এই পর্যন্ত উন্নত হইয়াছিল। সেনাপতি যুদ্ধকালে রথী, অশ্বারূঢ় যোদ্ধৃবর্গের উপরই বিশেষ লক্ষ্য করিতেন—পদাতিকগণের প্রতি অধিক আস্থা করিতেন না । গ্ৰীক জাতীয়দিগের যুদ্ধপ্রণালীও যে প্রথমতঃ এইরূপ ছিল, তাহা হোমর বিরচিত মহাকাব্য পাঠেই প্রতীত হয় । কিন্তু গ্ৰীকেরা অতি শীঘ্রই প্রজাতন্ত্র শাসনপ্রণালী প্রবর্তিত করিলেন। তাহ করাতে ভূম্যধিকারিবর্গের সম্মানের লাঘব হইল। প্রজামাত্রেই ভূম্যধিকারী হইতে লাগিল । সুতরাং তাহাদিগের দৃশ। নিতান্ত দরিদ্র না থাকায় সকলেই যুদ্ধের সজ্জা এবং অস্ত্ৰ শস্ত্রাদি ক্রয় করিয়া রাখিতে সমর্থ হইল। বিশেষতঃ গ্ৰীসদেশ অতান্ত পৰ্ব্বতময় ; তাহা অশ্বারূঢ় সৈন্তের পক্ষে বিশেষ বিক্রমের স্থল নহে। অতএব তথায় অশ্বারোহিগণ অপেক্ষাকৃত অনাদৃত এবং পদাতিকগণ অধিক সম্মানিত হইয়াছিল । যে স্থানে পদাতিক সৈন্তের সমাদর, তথায় রাজ্যশাসনপ্রণালীও নিতান্ত যথেচ্ছাচার বিদূষিত হইতে পারে না । রোমও স্বতন্ত্র-প্রজ দেশ ছিল । তথায় পদাতিক সৈন্তেরও সমধিক আদর ছিল । গ্ৰীক এবং রোমীয় পদাতিক সৈন্তের সহিত সংগ্রামে তাৎকালিক কোন জাতীয় লোকেই জয়লাভ বা সমকক্ষতা করিতে পারে নাই। যাহারাই ঐ দুই জাতির সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছে, তাহারাই পরাজিত এবং যেমন অনলে তুলারাশি দগ্ধ হয়, তদ্রুপ অত্যন্ত্রকাল মধ্যে বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে। নব্য ইউরোপীয় জাতিদিগের মধ্যেও যুদ্ধ প্রণালী অবিকল এইরূপ হইয়া আসিতেছে, দেখা যায়। যাবৎ উহাদিগের মধ্যে ভূম্যধিকারিবর্গের প্রাধান্ত ছিল, তাবৎকাল পদাতিক সৈন্তের যথোচিত আদর ছিল না। ক্রমে যেমন শাসনপ্রণালীর উৎকর্ষ হইতে লাগিল, অমনি পত্তিগণেরও মর্য্যাদা বৃদ্ধি হইল।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।