&g বিবিধ প্রবন্ধ । উহুদিগের এক একটী নিয়মরূপ কারণ নির্দেশ করিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া থাকেন। তখন ঐ সকল নিয়মের নাম ও জানা ছিল না । সুতরাং অন্ত কোন কারণ নির্দেশ করিতে না পারিয়া উক্ত কাৰ্য্যসমুদয়ে অবিচস্তনীয় বিশেষ বিশেষ শক্তির প্রাঙ্কুর্তাব স্বীকার করা হইত। ঐ সকল শক্তির উপাসনাই মনুষ্যদিগের আদিম ধৰ্ম্ম । এই আদিম-ধৰ্ম্ম এক্ষণে জড়োপাসনা’ নামে অভিহিত হইয়া থাকে। যখন জড়োপাসনার প্রথা প্রথম প্রচলিত হয়, তখন উপাসকেরা স্ব স্ব দেবশরীরকে প্রত্যক্ষ দেখিতেছি এইরূপ বোধ করিয়া থাকে । যে জল বা অগ্নি তাহারা সম্মুখে দেখে, তাহাকেই মূৰ্ত্তিমদেবতাবিশেষ ভাবে । কিন্তু অতি শীঘ্রই এই বুদ্ধির কিঞ্চিৎ অন্যথা হয়। সকল জলই এক, সকল অগ্নিষ্ট এক, সকল মৃত্তিকাই এক—ইত্যাদি জ্ঞান উপস্থিত হইলে, ঐ সকল ভুতের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাও একজন আছেন, এমত বোধ হইতে থাকে। তখনকার ধৰ্ম্মপ্রণালীকেও জড়োপাসনা বলা যায়, কিন্তু ইহা প্রথমকার অপেক্ষা কিঞ্চিৎ উচ্চ । ইহাতে পূজাকালীন দেবতার আবাহন এবং পূজাবসানে বিসর্জন আবগুক হয় । সুতরাং ইহাকেই নিরাকার ঈশ্বরোপাসনার প্রথম সোপান বলা যাইতে পারে। ঐ কাল হইতে গগনবিহারী জ্যোতিষ্ক সমুদয়ের উপাসনা প্রবল হইতে আরম্ভ হয় । মৰ্ত্তের বায়ু, জল, মৃত্তিকা, বহি অপেক্ষ: ঐ সকল জ্যোতিৰ্ম্ময় পদার্থ যে অবশ্য উৎকৃষ্ট তাহার কোন সন্দেহ হয় না । বিশেষতঃ, আলোকের সহিত জীব মাত্রের এমত সম্বন্ধ যে, তদর্শনেই সকলে পুলকপূর্ণ হইয়া উঠে। সুর্যের প্রকাশে যেন জগতে পুনর্জীবন্যাস হয়। অতএব প্রথমাবধিই আলোকের সহিত জীবনের বিশিষ্ট সোসাদৃশু প্রতীয়মান হইয়া থাকে। স্থর্যাতপ সংযোগে পুষ্পাদি প্রস্ফুটিত হয়, ফল সকল পরিণত হয়, শৈত্য নিবারিত হয়, অতএব স্বৰ্য্য মনুষ্যের যেমন হিতকারী, এমন আর কেহই নাই । যাজকেরাও ঐ সময় হইতে জ্যোতির্বিদ্যার অনুশীলন আরম্ভ করেন । সুতরাং জ্যোতিষ্ক উপাসনাই এই সময়ে পরম ধৰ্ম্ম হইয়া থাকে । এই ধৰ্ম্মপ্রণালী পূৰ্ব্ব অপেক্ষা ও উৎকৃষ্ট। ইহাতে সাকার উপাসনা হয় বটে, কিন্তু ইহার উপাস্ত পদার্থ, দুরবস্ত্রী অবিনশ্বর ও হিতকারী বলিয়া প্রতীত হয় । অতএব ইহাদের উপাসনাধীন চিত্ত বিশুদ্ধ হইবার সম্ভাবনা । ইহাই জগৎপাত ঈশ্বরের উপাসনার দ্বিতীয় সোপান । মনুষ্যের ধৰ্ম্মজ্ঞান এই পর্য্যস্ত বিকশিত হইয়া উঠিলেই ক্রমে ক্রমে তার একপ্রকার উপাসনার আরম্ভ হয় । মানবগণ জল, বায়ু, অগ্নি প্রভৃতির শক্তি
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।