দ্বিতীয় ভাগ । se ভাষার ক্রমোন্নতি বিষয়ে আর কয়েক নি ম প্রকাশিত হইয়াছে। তাহার একটী নিয়ম এই যে, ভাষার আদিমাবস্থায় দ্রব্যবাচক, গুণ-বাচক এবং ক্রিয়াবাচক শব্দের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না । দ্বিতীয় নিয়ম এই যে, সেই অবস্থায় উপসর্গ এবং বিভক্তির ব্যবহার হয় না। উপসর্গ এবং বিভক্তিগুলি পূর্ণাবয়ব শব্দ সকলের অপভ্রংশ হইতে বহুকাল পরে জন্মিয়৷ থাকে। তাগদিগের স্বষ্টি হইয়া গেলে ভাষার প্রগাঢ়তা এবং জটিলতা ক্রমে এতই বৰ্দ্ধিত হয় ষে, উহার বৈয়াকরণবন্ধনগুলি নিতান্ত দৃঢ় হইয় উঠে । কোন জাতীয় লোকের ভাষা এই অবস্থায় আসিয়া দাড়াইলে যদি সেই জাতি অপর কোন ভিন্নভাষী জাতির ঘনিষ্ঠ সংস্রবে আইসে, তবে কথোপকথনে ঐ জটিল ভাষার ব্যবহার স্বতঃই রহিতপ্রায় হইয়া যায় এবং ঐ ভাষার অনেকানেক অংশ শিথিলবন্ধ নুতন ভাষার মধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া তাহার অন্তঃসারত সম্বৰ্দ্ধিত করে। ভারতবর্ষে সংস্কৃতের এবং ইউরোপখণ্ডে লাটিন ভাষার অপভ্রংশ সমস্ত এইরূপে আধুনিক ভারতবর্ষীয় এবং ইউরোপীয় ভাষায় প্রবিষ্ট হইয়া আছে। উভয় স্থলেরই আধুনিক ভাষাগুলি বিলক্ষণ সতেজ এবং পরিপুষ্ট, কিন্তু কোনটাই প্রাচীন সংস্কৃত এবং লাটিনের স্তায় দৃঢ়সস্বদ্ধ নহে । লিপির পর্য্যায়ক্রম । মনুম্ভের মনোগত ভাব প্রকাশের আদিম এবং সাধারণ উপায় অঙ্গভঙ্গী বা ইঙ্গিত। যদিও সকল দেশে এবং সকল বিষয়ে ইঙ্গিত বা অঙ্গভঙ্গী অবিকল একরূপ হয় না বটে, তথাপি দৃষ্ট হইয়াছে যে, অনেক স্থলেই এবং অনেক বিষয়েই ইঙ্গিত-ব্যঞ্জন বা ইঙ্কিত দ্বারা ভাব প্রকাশের রীতি প্রায় একরূপই হইয়া থাকে। ইউরোপ খণ্ডের ভিন্ন ভিন্ন দেশে বধির এবং মুকদিগের শিক্ষার নিমিত্ত যে সকল বিদ্যালয়ের স্থাপনা হইয়াছে, তাহাতে প্রায় একই প্রকার অঙ্গভঙ্গীর প্রচলন হইয়া উঠিয়াছে। উত্তর-আমেরিকা, দক্ষিণ-আমেরিক, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিলও, প্রভৃতি নাঙ্গা স্থান হইতে যে বৰ্ব্বর লোকদিগকে সময়ে সময়ে আনিয়া একত্র করা হইয়াছে, তাহার। যদিও কেহ কাহার ভাষা বুঝিতে পারে না, তথাপি অনায়াসেই পরস্পরকৃত ইঙ্গিত বুঝিয়া এক প্রকার আলাপ করিতে পারে । উল্লিখিত মুকবধিরদিগের বিদ্যালয়ে ঐ বৰ্ব্বর লোকদিগকে লইয়া দেখা গিয়াছে যে, মুক বধির ছাত্রেরা উহাদিগের ইঙ্গিত বুঝিতে
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৫৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।