পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8や বিবিধ প্রবন্ধ । পারে এবং উহারাও ছাত্রদিগের ইঙ্গিত বুঝিয় তাহাদিগের সহিত আলাপে বিশেষ সন্তোষ অনুভব করে । এই সকল এবং অন্তান্ত অনেক প্রমাণ দ্বারা উপলব্ধ হয় যে, ইঙ্গিত দ্বারা ভাবের প্রকাশ করা মনুষ্যমাত্রেরই পক্ষে একবিধ কার্য্য এবং উহা প্রায়ই এক রীতিতে সম্পাদিত হয়। বাস্তবিক ইঙ্গিতব্যঞ্জন একরূপ হইবার একটী বিশেষ কারণই বিদ্যমান আছে । অঙ্গভঙ্গীর দ্বারা কোন বস্তুর বোধ জন্মাইতে হইলে হস্তাদির দ্বারা সেই বস্তুর অনুকৃতি বা ছবি প্রস্তুত করিয়া প্রদর্শন করা নৈসর্গিক ব্যাপার । এক বস্তুর ছবি মোটামুটি একরূপই হইয়া থাকে । এই জন্যই সৰ্ব্ব দেশের সৰ্ব্বকালের ইঙ্গিতব্যঞ্জলা সুবহুস্থলেই একবিধ হয়। ইঙ্গিত-ব্যঞ্জনার সারভূত যে চিত্রকরণ ব্যাপার, তাহা হইতেই লিপিকার্য্যের আরম্ভ । দুইটা মনুষ্য পরস্পর সন্নিহিত থাকিলেই ইঙ্গিত দ্বারা অন্তোন্তকে আপনাদিগের অভিপ্রায় অবগত করিতে পারে। কিন্তু দূরবর্তী স্বজনদিগকে মনোগত ভাব জানাইবার প্রয়োজন সৰ্ব্বদাই উপস্থিত হইয়া থাকে । সেই প্রয়োজন সাধনের নিমিত্ত নিকটবৰ্ত্তী ব্যক্তিকে যে ইঙ্গিত প্রদর্শিত হয়— দূরবর্তী ব্যক্তিকেও তাঁহারই অনুকৃতি চিত্রিত করিয়া পাঠাইতে হয়। বাস্তবিক বর্বরজাতীয় লোকদিগের মধ্যে এই প্রকার চিত্রলিপির প্রচলন সৰ্ব্বদেশ-সাধারণ ৷ হঠাৎ বোধ হইতে পারে যে, মনুষ্যদিগের তেমন নিকৃষ্টাবস্থায় চিত্রকার্য্যের তাদৃশ বাহুল্য কিরূপে হয় ? কিন্তু শিশুদিগের মধ্যে কয়লা খড়ি প্রভৃতি দ্বারা মাটিতে আঁচড় কাটিয়া খেলা করিবার রীতি যেমন অতি অল্প বয়সেই দেখা দেয়, তেমনি দৃষ্ট বস্তুর অনুকৃতি প্রস্তুত করার প্রবৃত্ত্বি মানবজাতির অতি আদিম অবস্থা হইতেই জন্মে। যেখানে ভূগর্ভনিহিত মনুষ্যকঙ্কাল পাওয়া গিয়াছে, সেই খানেই তৎকালেও মনুন্যেরা যে খোদকতাকার্য্যে মনোনিবেশ করিয়াছিল, এবং ঐ কার্য্যে কতকটা দক্ষতাও লাভ করিয়াছিল, তাহার ভুরি ভুরি চিহ্ন প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। বস্তুতঃ সশব্দ ইঙ্গিতব্যঞ্জন এবং বৃক্ষের পত্রে, ত্বকে, কাষ্ঠে, প্রস্তরফলকে এবং স্বশরীরে সেই ইঙ্গিত সকলের চিত্রকরণ বা খোদকতা, একই সময়ে প্রবৰ্ত্তিত হইয়াছিল, যদিও এমন কথা বলা যাইতে পারে না বটে, তথাপি যতদূর অনুসন্ধান হইয়াছে, তাহাতে উহাদিগের অন্তরকাল যে অধিক ছিল এরূপ অনুমানও করিতে পারা যায় না। প্রায় প্রথম হইতেই সশব্দ ইঙ্গিত এবং চিত্রকরণএই উভয় কাৰ্য্যই যেন একযোগ হইয়া চলিয়াছে বোধ হয় ।