দ্বিতীয় ভাগ । ©☾ বলিয়া গেল, “যদি কালিকার কাজ আর কোথাও না জুটিয়া থাকে, তবে আমারই ক্ষেতে যাইস ।” - এই সকল ব্যাপার দেখিয়া আমার বোধ হইল যে রাজার শাসন অপেক্ষা গ্রামের শাসন শত সহস্রাংশে উৎকৃষ্ট। আমি ঐ গ্রাম্য মণ্ডলদিগের মধ্যে একজনকে নিভৃতে বলিলাম, “তোমরা চোরের দও যেরূপ করিলে তাহ দেখিয়া যৎপরোনাস্তি সুখী হইলাম। কিন্তু চোর যদি থানায় গিয়া নালিস করে যে তাহার শারীর দও করা হইয়াছে, তাহা হইলে কি হইবে ?” * * * “সে থানায় যাইবে না। আর মনে করুন যদিই যায় তাহা হইলে সে ত গ্রামে আর কাহার স্থানে মজুরি পাইবে না । তাহাকে এ গ্রামের বাস উঠাইতে হইবে।” * * * “ভাল, ঐ ব্যক্তি যদি গ্রামাস্তরের লোক হইত, তাহা হইলে কি করিতে ?” * * * “যদি গ্রামের ভিতরেই ধরিতে পারিতাম, ভাল করিয়াই উত্তম মধ্যম দিতাম, দিয়া ছাড়িয়া দিতাম।” * * * *সে নালিস করিলে কি হইত ?” * * * “কিছুই প্রমাণ হইত না।” কথায় কথায় জানিতে পারিলাম যে ঐ গ্রামের কোন লোক গ্রামান্তরবাসী কাহার স্থানে টাকা কর্জ করে লা। কর্জ করিবার প্রয়োজন হইলে মওলদিগকে জানায় এবং মণ্ডলের গ্রাম হইতেই টাকা কর্জ দেওয়ায়। ঐ গ্রামের জমিদার যখন আইসেন, তাহার যথেষ্ট সন্মান সমাদর করে, তাহাকে চাদ তুলিয়া দর্শনী দেয় ; কিন্তু গ্রামের ভিতরে ঢুকিতে নিষেধ করে। যে জমীদারের অধিকারে ঐ গ্রাম তিনি প্রজাদিগের মন রাখিয়াই চলিতেন দেখিয়াছি। এবং শুনিয়াছি তিনি স্বচ্ছদে আপনার ঘরে বসিয়াই যথাকালে খাজনা এবং যাহা আবোয়াব ধার্য্য ছিল তাহ নিৰ্ব্বিঘ্নে পাইতেন । কিন্তু ওরূপ স্বাধীন-তন্ত্র গ্রাম আর অধিক নাই। অধিক স্থলুেই গ্রামের শাসন জমীদারের হস্তগত হইয়া গিয়াছে। আমি যশোহর জেলার একটা জমিদার কাছারিতে ফৌজদারী বিচার যেরূপ দেখিয়াছি, এক্ষণে তাহ বর্ণন করিব ; উহাও সমাজের আত্মশাসন শক্তির একটা উদাহরণ । জমীদারের নায়েব বিচারপতি, গোমস্ত এবং মুখ্য মণ্ডলের সভাস্থ এবং নীয়েব মহাশয়ের সহকারী । অভিযোক্তা একী ব্রাহ্মণ । অভিযোগের বিষয় এই—সেকরাকে একযোড় রূপার বালা গড়াইতে দেওয়া হইয়াছিল। সেকর বালা গড়িয়া যথাকলে দেয় নাই আর অনেক পরে একষোড়া সীসকপুর্ণ বালা দিয়া রূপ চুরি করিয়াছিল। বিচারপতি বালা যোড়াট দেখাইয়৷
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৬৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।