●● বিবিধ প্রবন্ধ । সেকরাকে জিজ্ঞাসা করিলেন এই বালা তুই গড়িয়া দিয়াছিলি ? সেকরা বলিল আমি দিয়াছিলাম বটে, কিন্তু আমি নিজ হাতে গড়ি নাই, আমার এক বেট কারিগর ওটা গড়িয়াছিল এবং সেই উহাতে সীসা পুরিয়া দিয়াছিল । একজন মণ্ডল জিজ্ঞাসা করিলেন “তোর কোন কারিগর রে।” সেকরা একটু ঢোক গিলিয়া একজনের নাম করিল। অমনি আর একজন বলিয়া উঠিল “সে ত আজি দুই বৎসর তোর দোকান ছাড়া হইয়াছে। তোরা দুই বাপ বেটা ভিন্ন আর কেহ তোদের দোকানে কারিগর নাই।” সেকরা অমিতা অমিতা করিতে লাগিল । নায়েব মহাশয় অভিযোক্ত ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কয় ভরি রূপা দিয়াছিলেন ঠাকুর ?- * * * “আট ভরি”— সেকরাকে জিজ্ঞাসা করিলেন “কেমন রে আট ভরি বটে ?” * * “আজ্ঞা আট ভরি* * * “আট ভরির দাম আট টাকাই ধরা যাউক” এই বলিয়া সেকরাকে বলিলেন, “এই আট টাকা, আর জুয়াচুরির জরিমান দুই টাকা, আর মিথ্যা ওজর করিয়াছিস তাহার জরিমান আর দুই টাকা, সৰ্ব্বশুদ্ধ বারটা টাকা এষ্টক্ষণে হাজির কর।” সেকর বলিল “এত রাত্রে অত টাকা কোথায় পাব ?” * * “ফের যদি কোন কথা কবে জরিমানা বাড়িবে।” সেকরা আস্তে আস্তে চলিয়া গেল, দুইজন পাইক তাহার সঙ্গে গেল, অৰ্দ্ধ ঘণ্টার মধ্যে বারট টাকা আনিয়া দিল । ব্রাহ্মণ আটট টাকা হাতে হাতে পাইয়। চলিয়া গেলেন। সেকরা সেই সীসক পূর্ণ বালা ফেরত চাহিল, নায়েব একটু মুচকি হাসিলেন, গোমস্ত চক্ষু রক্ত বর্ণ করিয়া ৰলিলেন, ঐ বালা লইয়া বুঝি আবার কাহাকেও ঠকাইতে চাহিস্ এই বলিয়া সেকরাকে গালি গালাজ করিলেন। জমিদারী অন্তঃশাসনে রাজশাসনের ছায়া দেখিলাম, তথাপি সাক্ষাৎ রাজশাসনের অপেক্ষা ইহার মলিনতা অনেক কম বোধ হইল। উহ। নিতান্ত বিচার বিক্রয়ের দোকানও নয়, মিথ্যা প্রবঞ্চনার নিজস্ব ক্ষেত্রও নয়, আর অভিযোজ্য এবং অভিযোক্তা উভয়ের সর্বনাশেরও পথ নয়। এ সকল অনেক দিনের কথা । ঐ সময়ে গবর্ণমেণ্ট অবৈতনিক ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগে একটু মনঃসংযোগ করিয়াছিলেন। গবর্ণমেণ্টের কোন সেক্রেটারীর সহিত দেখা হইলে তিনি একটা স্থানের নাম করিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করি. লেন আমি ঐ স্থানে কখন গিয়াছিলাম কি না । তিনি যে স্থানটীর নাম করিলেন সেটা রাজসাহী জেলার অন্তর্গত । আমি একাধিকবার সেখানে গিয়াছিলাম। কথায় কথায় শুনিয়াছিলাম ঐ স্থানে একটা মুন্সেী আদালত
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।