6b. বিবিধ প্রবন্ধ । ইউরোপের ইতিহাসে দুইবার মাত্র এরূপ ঘটনা ঘটিয়াছে যখন সমাজের মধ্যে পবিত্রভাবের উত্তেজন হেতু রাজদণ্ড্য অপরাধে এবং সমাজ দণ্ড্য পাপাচারে কোন ইতর বিশেষ করা হয় নাই। একবার রোমীয়দিগের অভু্যদয়ের এবং অতি প্রাবল্যের সময়ে, তাহাদিগের সেন্সর নামক কৰ্ম্মচারীর প্রজাবুহি আপনাপন গৃহে বসিয়া কিরূপ ব্যবহার করে তাহারও ংবাদ লইতেন এবং পাপাচারীর দগু করিতেন । ঐ সময়ে রোমীয়েরা যেমন সতেজ হইয়াছিল তেমন আর কখন হয় নাই। ইংলওও যখন প্রথমে প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল, যখন ইংরাজ যোদ্ধৃগণের সাহস, বীৰ্য্যবত্তা এবং ধৰ্ম্মশীলতা ইউরোপীয় অপর সকল লোকের অপেক্ষ অধিক হইয়াছিল, সেই সময়ে অর্থাৎ ক্রমওয়েলের অধিকারকালে, পাপীচরণে এবং অপরাধে বড় ইতর বিশেষ করা হইত না । তখন যেমন অপরাধের তেমনি পাপাচারেরও বিচার এবং দণ্ড হইত। তখন ইংরাজের বাহ এবং গার্হ্য বা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশু এইরূপ দুইটী-জীবন ধারণ করিতেন না, অর্থাৎ এখন যেমন কথা উঠিয়াছে আমি সরকারি কাজ কৰ্ম্ম কিরূপ নিৰ্ব্বাহ করি তাঁহাই দেখ, আমি ঘরে বসিয়া কি করি না করি অষ্ঠের তাহা দেখিবার কোন অধিকার নাই—তখন সেরূপ কথা উঠে নাই । ইংরাজ তখন তেজোবীৰ্য্যে জাজ্জ্বল্যমান হইয়াছিলেন। ভারতবর্ষেও কোন কালে পাপাচরণের প্রতি রাজদ ও যুক্ত হইত। কিন্তু সে কাল অনেক দিন অতীত হইয়া গিয়াছে । আমার অনুমান এই যে বৌদ্ধ রাজাদিগের সময়েই রাজদণ্ড্য অপরাধে এবং অন্তবিধ পাপাচরণে প্রথমে প্রভেদ জন্মে এবং মুসলমানদিগের সময়ে সেই প্রভেদ সম্পূর্ণ বদ্ধমূল হইয়া যায়। আর্য্যেতর লোকের দেশের অধিপতি হইলে, তাহারা সমাজপতি হইতে পরিলেন না । সুতরাং পবিত্র হিন্দু সমাজকে আপনার পবিত্রভাব রক্ষার নিমিত্ত অন্তঃশাসনের উপায় করিতে হইল। অতএব সমাজের অন্তর্নিবি৯ প্রধান প্রধান লোকদিগকেই সমাজপতির স্থানীয় করিয়া লওয়া হইল এবং তাহাদিগের শাসন শিরোধাৰ্য্য করা হইল । পুরাণ সংহিতাদিতে পুনঃ পুন: উল্লেখ আছে যে, সমাজ রক্ষার্থ “মহাত্মগণ” বা “মনীষিগণ” এই এই নিয়ম করিয়া দিয়াছিলেন । ঋষিগণ অথবা “সংহিতাকারগণ” বলিয়া ঐ সকল লোকের কোন উল্লেখ নাই। ইহাতেই স্পষ্ট দেখা যায় যে, হিন্দু সমাজে আত্মশাসন কেমন মুবিস্তৃত এবং কেমন দৃঢ়মূল। শাস্ত্রের কথা না লইলে চিদুর কোন কথা শুনে না বলিয়া যে প্রবাদ আছে সেটা প্রকৃত কথা নহে।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।