やりの বিবিধ প্রবন্ধ । দুই শাসনের মধ্যে আবার একটা সমাজ-শাসন রাখিবার প্রয়োজন নাই । কোম্টির মতাবলম্বীরা এরূপ কথা বলিতে পারেন না। কারণ, তাহার সমাজের শাসনকেই সকল শাসনের অপেক্ষ উচ্চতর বলিয়া মানেন। অপরাপর খৃষ্টান ইউরোপীয়রাই ঐ কথা বলিয়া থাকেন। কিন্তু তাহারা জানেন যে রাজব্যবস্থা এবং ধৰ্ম্মব্যবস্থা সত্ত্বে ও তাহাদিগের ভদ্র সমাজে একটা ইজ্জতের বা সম্বমের ব্যবস্থা চলিয়া আসিতেছে এবং ঐ ব্যবস্থা ইউরোপীয় ভদ্রলোকদিগের মধ্যে আছে বলিয়াই উহারা “ভদ্রলোক” আর ইউরোপীয় ছোট লোকদিগের মধ্যে ঐ ব্যবস্থা স্থত্রের নাম গন্ধও নাই বলিয়াই তাহার নিতান্ত পশু । ফলকথা লোকে কাহার আচার ব্যবহারকে ভাল বলে কি না বলে, তাহ জানিতে না পারিলে অনেকালেক স্থলে এবং অধিকাংশ লোকেরই ধৰ্ম্মচুতি হয়। এই জন্য রাজশাসন এবং ধৰ্ম্মশাসন সত্ত্বেও সমাজ শাসনের বিলক্ষণ প্রয়োজন আছে । সমাজের শাসন অসম্মানিত হওয়া অতি জুলক্ষণ । উহা হওয়া লোকের প্রকৃতিতে পাশব স্বৈরভাবের উত্তেজনা বুঝায় এবং পাপাচরণের বৃদ্ধি স্থচনা করে । বঙ্গদেশে, সমাজের শাসন নিতান্ত অল্প প্রবল , নহে। রাজধানীতে এবং বড় বড় সহরে কিছু কম বটে, কিন্তু সমস্ত পল্লীগ্রামে সমাজের শাসন বিলক্ষণ সজীব এবং সতেজ । সহরের অপেক্ষা পল্লীগ্রামের লোকেরা সরল এবং ধৰ্ম্মভীরু । কোন সমাজেরই শাসন সাক্ষাৎ শারীর দণ্ড বা সাক্ষাৎ ধনদণ্ড প্রয়োগ দ্বারা সাধিত হয় না । সমাজের দণ্ড ত্যাগরপকই হইয়া থাকে। সমাজ পিতৃতুল্য ; দুষ্ট সন্তানের প্রতি বলেন, “রে দুষ্ট! তোকে আমি ত্যাগ করিলাম।” বঙ্গসমাজ ঐ ত্যাগের কয়েকটী চিকু করিয়া রাখিয়াছেন যথা— (১) পংক্তি বারণ—(২) নিমন্ত্রণ বারণ—(৩) ছ’কা বারণ – (৪) আসন বারণ--- (৫) নাপিত ধোবা বারণ । কিছুকাল পূৰ্ব্বের কথা ৰলিতে পারি, আমি স্বচক্ষে তিন চারিট গ্রামে ঐ সকল দণ্ডের কোন কোনটীর প্রয়োগ এবং তাহাতে অতি সুফল ফলিয়াছে দেখিয়াছি। একজনের প্রতি হুকা বারণ হইয়াছিল ; তিনি সত্য সুতাই একটা অপকৰ্ম্ম করিয়াছিলেন—একজন ব্রাহ্মণকে পাছক প্রহার করিয়াছিলেন । হক বারণ হইলে ঐ ব্যক্তি গলবস্ত্র হইয়া ব্ৰাহ্মণের নিকট ক্ষমা প্রার্থন। করিলেন, এবং সমাজের দণ্ড হইতে নিস্কৃতি পাইলেন। আর একস্থলে একজনের নিমন্ত্রণ বারণ দেখিয়াছিলাম । তিনিও একট।
পাতা:বিবিধ প্রবন্ধ (ভূদেব মুখোপাধ্যায়) দ্বিতীয় ভাগ.djvu/৬৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।